আজ ১ আগস্ট জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে জামায়াত ঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রশাসনের সহযোগিতা না দেওয়ার প্রেক্ষিতে আজ ১ আগষ্ট, মঙ্গলবার সকাল ১১:৩০মি: রাজধানী পল্টনের একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর (উত্তর+দক্ষিণ) উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক সংসদ সদস্য এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আযাদ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ও প্রচার মিডিয়া বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে আজ ১ আগষ্ট, মঙ্গলবার, বেলা ২টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। গতকাল ৩১ জুলাই, সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ন সমাবেশ বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী কোন দলের পক্ষ না হয়ে জনগনের পক্ষে ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, ডিএমপি কমিশনার আমাদেরকে সমাবেশ না করার জন্য মৌখিকভাবে জানানোর পাশাপাশি ডিএমপির মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াতকে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা যদি ডিএমপির সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে সমাবেশ বা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আর বলেন, রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন নেই। সভা-সমাবেশ করা জনগণের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধান প্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আরো লক্ষ্য করছি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়মিত মিছিল, মির্টিং ও সমাবেশ করে যাচ্ছে; কিন্তু সরকার জামায়াতে ইসলামীকে অন্যায়ভাবে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। যা আইনের শাসনের পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। বারবার সহযোগিতা চাওয়ার পরও সরকার জামায়াতে ইসলামীকে সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এই সরকার স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিল করার কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে বদ্ধপরিকর। আমাদের এই দাবি আজ গণ দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা জনগণের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবো না ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, অতীতের মতো আমরা নগরবাসীকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা সংঘাত-সংঘর্ষ চাই না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সংঘাত এড়ানোর লক্ষে আমরা আজকের (মঙ্গলবার) কর্মসূচি স্থগিত করে আগামী ৪ আগস্ট, শুক্রবার রাজধানীতে পুনরায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষনা করছি। আমরা আশা করি পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। সাথে সাথে আমরা আবারো পুলিশ প্রশাসনের সংবিধান ও গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করছি পুলিশ প্রশাসন কোন দল বিশেষ নয়, দেশের পক্ষে, জনগনের পক্ষে ভূমিকা পালন করবে, সেই সাথে প্রশাসনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কোন দল চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। তাই কোন দল বিশেষের নয়, দেশ ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করুন।