বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বর্তমান এই সময়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গু এক মহা আতঙ্কের নাম। সর্বস্তরের মানুষের মনে প্রচণ্ড ভয় ঢুকে পড়েছে। মানুষ ডেঙ্গু অতঙ্কে ভূগছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু এমন এক রোগ যা শুধু চিকিৎসা দ্বারা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সমন্বিত উদ্যোগ। ভয় না পেয়ে আমাদের উচিত ব্যপক গণসচেতনতা তৈরি করে সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রচেষ্টা চালানো। অথচ সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের অভাবে দেশে ডেংগু পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে এবং সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এই দূর্যোগ থেকে দেশের মানুষকে হেফাজত করতে এখনই জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সরকারের সকল সেক্টরের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
তিনি আজ (রবিবার) সকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ঘোষিত ৭ দিন ব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে “ডেংগু রোগের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনায়” আয়োজিত দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামসুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দেলওয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন, রমনা থানা সেক্রেটারী আব্দুস সাত্তার সুমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, চিকিৎসা, বিশ্রাম এবং সতর্কতা অবলম্বন করলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সাধারণত ডেঙ্গু ভাল হয়ে যায়। তাই একে অবহেলাও করা যাবে না আবার ভয়ও পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল প্রতিরোধ করা। এডিস মশাই হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরের একমাত্র বাহণ। তাই এডিস মশার আবাস ধ্বংস করতে হবে। রাসুল (সাঃ)বলেছেন “পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ”। ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাড়ির আশপাশ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষকরে কোনভাবেই আশপাশে যেন পানি জমে থাকতে না পারে বিশেষ করে ঝোপজঙ্গল, যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে, যেমন ফুলের টব, অব্যবহৃত বিভিন্ন কৌটা, খালি বোতল, পরিত্যক্ত টায়ার, বিভিন্ন ভাংগা পাত্র, ডাবের খোসা ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থকে এবং এসব যেন বাড়ির আশে পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। পানি চলাচলের নালা-নর্দমা সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেষ্ট হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা পাওয়া প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অথচ সরকারের সে অধিকার থেকেও মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসা পাওয়ার জন্য মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে হচ্ছে। স্বাধীন দেশে এমন অবস্থা চলতে পারে না। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হবে এবং সেইসাথে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। একইসাথে ডেঙ্গু নামক এ দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই বরং তারা দুর্নীতি ও লুটপাতে ব্যস্ত। একদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে অন্যদিকে সরকার এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। অথচ দেশের হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সরকার যে সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে এটাই তার বড় প্রমাণ। ফলে দেশের জনগণের সাথে এ ধরণের তামাশা দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। আমি সরকারের এমন ন্যক্কারজনক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। সেইসাথে সরকারকে এ দুর্যোগ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলাম বুলবুলের পরিচালনায় “ডেংগু রোগের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য কামনায়” বিশেষ দোআ ও মোনাজাত করা হয়।
এছাড়াও আজকে খিলগাঁও পুর্ব, পল্টন, মতিঝিল, খিলগাঁও পশ্চিম, যাত্রবাড়ি পশ্চিম, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ দক্ষিণ, বংশাল, ডেমরা উত্তর সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানায় ডেংগু সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।