বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা) এর জীবনের অবিস্মরণীয় ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ মো’জেজা হচ্ছে শবে মেরাজ এর ঘটনা। এই মহিমান্বিত রজনীতে মুহাম্মদ (সা) পৃথিবী থেকে সাত আসমান পেরিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আরশে উপনীত হন এবং তাঁর সাক্ষাত লাভ করেন। একটি কাঙ্খিত সুখি-সমৃদ্ধশালী পৃথিবী গড়তে এই বরকতপূর্ণ রাতেই রাসূল (সা)আল্লাহর পক্ষ থেকে ১৪ দফা দিক নির্দেশনা লাভ করেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত সমাজ মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার সাথে সাথে মেরাজের সত্যতা পৃথিবীবাসীর কাছে আরোও স্পষ্ট হয়েছে।’ তিনি মিরাজের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে সত্যের উপর দৃঢ় ও অবিচল থেকে তাকওয়া ভিত্তিক ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের আহবান জানান।
আজ রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত পবিত্র শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘হিজরতের কিছু দিন পুর্বে রাসুল সা.এর মেরাজের ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটে। একটি সৃজিত জাতির জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণের যাবতীয় কর্মকান্ডের বাস্তব প্রশিক্ষণই ছিল এই মহামিলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো রাসূল (সা) কে এই রজনীতেই অবহিত করা হয়। বস্তুত মেরাজই হলো ইসলামী গতিধারার মূল উৎস। তাই মুসলিম জাতিসত্তার জন্য শবে মেরাজ এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ এবং নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব যে একমাত্র আল্লাহরই, তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করানোই মেরাজের উদ্দেশ্য। আল্লাহর এই সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ ও তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু করার সাধ্যও যে কারোও নেই। এই বিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করাই মেরাজের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ তা’য়ালার একান্ত সান্নিধ্য লাভ, ঊর্ধ্বলোক, ইহকাল, পরকাল, নভোমন্ডল, বেহেশত, দোযখ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করাও মেরাজের অন্যতম উদ্দেশ্য। সর্বোপরি ভবিষ্যত ইসলামি রাষ্ট্রেকে নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করে গড়ার উদ্দেশ্যেই মহান স্রষ্টা তাঁর প্রিয় হাবীবকে নিজ সান্নিধ্যে টেনে নিয়েছিলেন।
ড. মাসুদ বলেন, বর্তমান সময়ের এই অশান্ত পৃথিবীকে শান্তির বার্তা দিয়ে যায় রাসূলের (সা) শবে মে’রাজ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘হাদিসে উল্লেখ আছে যে মিরাজ রজনীতে নবী করিম (সা.) ও তাঁর উম্মতের জন্য কয়েকটি উপহার প্রদান করা হয়। প্রথমত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। দ্বিতীয়ত, উম্মতের যেসব ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, তাদের মাগফেরাতের ঘোষনা। তৃতীয়ত, সূরা আল-বাকারার শেষাংশ। চতুর্থত, একটি কাঙ্খিত সুখি-সমৃদ্ধশালী সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে সূরা বনি ইসরাইলে বর্ণিত মহান রবের ১৪ দফা নির্দেশনা। যা অনুসরনের মধ্যে আমাদের ইহকালীন কল্যান ও পরকালীন সফলতা নির্ভর করছে। যথা ১. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে কারও শরিক না করা ২. পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা, ৩. আত্মীয়স্বজন, এতিম ও মুসাফিরের হক মেনে চলা ৪. অপচয় না করা ৫. অভাবগ্রস্থ ও প্রার্থীকে বঞ্চিত না করা ৬. হাত গুটিয়ে না রেখে সব সময় কিছু দান করা ৭. অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা না করা। অথচ আমাদের দেশে যেভাবে মানুষ হত্যা ও গুম-খুন চলছে যা সম্পূর্ণ মেরাজের চেতনা বিরোধী ৮. দারিদ্রের ভয়ে সন্তান হত্যা না করা ৯. ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া ১০. এতিমের সম্পদের ধারেকাছে না যাওয়া ১১. যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, তা অনুসন্ধান করা ১২. মেপে দেওয়ার সময় সঠিক ওজন পরিমাপ করা ১৩. প্রতিশ্রুতি পালন করা ১৪. পৃথিবীতে দম্ভভরে চলাফেরা না করা। এই দিকনির্দেশনার আলোকে যদি আমাদের সমাজ বিনির্মাণ করা হয় তবে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ ও কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত হবে ইনশা’আল্লাহ।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, শবে মেরাজ আল্লাহর রাসুল (সা:) এর জীবনে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। মেরাজের শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারলেই মুমিন জীবনে সফলতা আসবে। মেরাজের অন্যতম উপহার হলো নামাজ। নামাজ মুমিনের জীবনকে পরিবর্তন ও সুন্দর করার জন্য অপরিহার্য। কারণ নামাজ মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। তাই আমাদের উচিৎ শবে মে’রাজের শিক্ষার আলোকে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করা।