বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, বিশ্ব সভ্যতা বির্নিমাণের প্রতিটি ধাপে শ্রমজীবি মানুষের ঘাম ও শ্রম মিশে আছে। ‘‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগে তার মজুরী দিয়ে দাও’’ ইসলামী শ্রমনীতির এই মূলমন্ত্র সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে শ্রমজীবি মানুষ তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবে এবং সমাজের সকল স্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের খিলগাঁও থানা আয়োজিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য ও খিলগাঁও থানা আমীর আব্দুল্লাহ আলামীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ফরিদুর রহমান, শামছুর রহমান, জামায়াত নেতা এস এম জুয়েল, আব্দুর রহমান সাজু, মোহাম্মদ আলী ভুট্রো, ইলিয়াস মৃধা, আশরাফুল আলম ইমন, রওশন জামান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ড. মাসুদ বলেন,১৮৮৬ সালে শ্রমজীবি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মাহুতি দেয়ার ১২৮ বছর পরেও শ্রমজীবি মানুষের মৌলিক অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কারখানায় কাপড় তৈরী করছে তার ছেলে মেয়েরা কাপড় পরতে পারছে না। যে শ্রমিক লক্ষ কোটি মানুষের জন্য ঔষধ তৈরী করছে তার ছেলেমেয়েরা চিকিৎসায় ঔষধ পাচ্ছে না, টাকার অভাবে তাদের ছেলেমেয়েরা ঠিকমত লেখা পড়া করতে পারছে না। অতীতে বহু সরকার শ্রমজীবি মানুষকে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় গেলেও শ্রমজীবি মানুষের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোন ভূমিকা রাখেনি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শ্রমজীবি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমস্যা সমাধানে শ্রমিক অঙ্গনে সৎ যোগ্য ও নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন নেতৃত্ব গড়ে তুলার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা ক্বাসাসে মহান আল্লাহ পাক শ্রমজীবি মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন তা তুলে ধরে ইসলামী শ্রমনীতি সমাজে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে শরীক হওয়ার উদাত্ত আহবান জানান।
তিনি আরোও বলেন, শ্রমজীবী মানুষ এখনো নানাভাবে নির্যাতিত, অবহেলিত ও শোষণ-বঞ্চনার শিকার। আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমজীবি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন সেই আমেরিকাসহ তৃতীয় বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষরা এখনো ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর গার্মেন্টস শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। মালিক পক্ষ তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অসহায় শ্রমিকদের প্রচুর পরিমানে পরিশ্রম করালেও পর্যাপ্ত মজুরী থেকে এখনো তারা বঞ্চীত। শতাব্দীর ভয়াবহতম রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় দায়ী মালিকদের বিচার এখনো হয়নি। সরকারের ব্যর্থতায় নিহত ও আহত শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরনও পুরোপুরি পায়নি। তিনি ঝুঁকিপূর্ন শিশু শ্রম বন্ধ, কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমমজুরী এবং নিরাপত্তা প্রদান, বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরনের জোর দাবী জানান।