বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক প্রেরণার দিন। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দানের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজীরবিহীন। এরফলে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। যা বিশ্ব দরবারে আমাদের জাতিসত্তাকে সম্মানিত ও গর্বিত করেছে। অথচ বিজাতীয় আগ্রাসনে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আজ অরক্ষিত। ফেব্রুয়ারি আসলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা সম্পর্কে কথা বলা হলেও ভাষার উৎকর্ষ ও বিকাশ সাধনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
তিনি ভাষা শহীদ ও ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এসময় তিনি রাজধানীর চকবাজারে আগুনে পুড়ে নিহত সকলের মাগফেরাত কামনা করেন এবং সকল ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাক্তি ও পরিবারকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পুনর্বাসনের আহ্বান জানান।
রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মোকাররম হোসাইন এর সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, মাওঃ আবু নাইম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য ও খিলগাঁও থানা পুর্বের আমীর আব্দুর রহমান সাজু, মহানগরী শুরা সদস্য ও খিলগাঁও থানা পশ্চিমের আমীর এস এম জুয়েল প্রমুখ।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আমাদের অনেক ত্যাগ থাকলেও আজও আমরা সেই ভাষাকে যথাযথ ভাবে সম্মান দিতে পারিনি। ভাষা আন্দোলনের ৬৭ অতিক্রান্ত হলেও আজও সকল পর্যায়ে মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি। সরকারি ভাবে মাতৃভাষা বাংলা উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহার না করায় আমাদেরকে এখনো বিদেশী ভাষার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, যা কোন ভাবেই আমাদের কাছে কাম্য নয়। এমনকি চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষার গ্রন্থগুলো এখনো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি। তাই বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে যথাযোগ্য মর্যাদায় সমন্নিক করে বিজাতীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। তাহলেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের জীবনদান সফল ও স্বার্থক হবে।”
তিনি ভাষা আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মরহুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের অবদান উল্লেখ করে বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসুর জিএস থাকাকালীন সময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণের জন্য তিনি ৩ বার কারাবরণ করেন। এমনকি ভাষা আন্দোলনের জন্য তাকে চাকরিচ্যুতও করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি সকল ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন, শহীদ ভাষা সৈনিকদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পুনর্বাসনের আহ্বান জানান।
তিনি আরোও বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের চেতনা। শহীদ সালাম, বরকত, রফিক ও জববার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন এদেশের মানুষ কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে জানে না। কিন্তু বর্তমানে আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে মানুষের অধীকার আজ ভূলুন্ঠিত। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছেনা। ক্ষমতাসীনদের অপরাজনীতি ও দুঃশাসনের কারণে দীর্ঘকালের পরিক্রমায়ও মানুষের অধীকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশ ও ধর্ম বিরোধী কোন অপশক্তিকে এদেশের জনগণ অতীতে কখনো মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও মেনে নিবে না। তাই মানুষের মৌলিক ও ভোটের অধিকার আদায়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জুলুমবাজ ও ফ্যাসীবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভুমিকা পালন করতে হবে।
দোআ অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের শাহাদাত কবুল ও তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে বিশেষ দোআ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কলাবাগান, খিলগাঁও, রমনা, কদমতলী, যাত্রাবাড়ি, পল্টন, কোতয়ালী, লালবাগ, নিউমার্কেট সহ বিভিন্ন থানায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোআ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।