★সরকারের ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
★কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের সহযোগিদের পেরেশান থাকতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। জনগণকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। দেশে জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের মদদে বর্তমান আওয়ামী সরকার নানা কূটকৌশলে গত ৭ জানুয়ারি এক অদ্ভূত ডামি নির্বাচন করে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই আবারো ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণ সরকারের এই ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব সরকারের ডামি নির্বাচনকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে একঘরে হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারের ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
আজ ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সদ্য কারামুক্ত সেক্রেটারী জেনারেল, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ.টি.এম মাসুম, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, কুরআনের সবগুলো বিধানই সমাজে কায়েম করা ফরজ। কোনো একটি বিধান অস্বীকার করলে কাফির বলে গণ্য হবেন। অথচ আমাদের দেশে কুরআনের বিধান চালু নেই। এজন্য নাগরিকগণ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কুরআনের বিধান চালু হলে মানুষ প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে। মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদেরকে শপথ নিতে হবে এ পথে হয়তো আমরা বিজয়ী হবো নতুবা আমাদের জীবন চলে যাবে তবুও এ থেকে আমরা বিচ্যূত হবো না।মানুষের ঘরে ঘরে আল্লাহ দ্বীনের দাওয়াত ও জামায়াতের আহবান পৌঁছে দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তিদের নিজেদের পরিবার, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেই এসেছি নিশ্চয়ই আল্লাহই আমাদের রব। তিনি আমাদের হুকুমদাতা, তিনি আমাদের বিধান দাতা, রিজিকদাতা সবকিছু, এটা স্বীকার করেই আমরা দুনিয়ায় এসেছি। সুতরাং সত্যিকার অর্থে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এই কথা মেনে নেওয়ার সাথে সাথে তা বাস্তবায়নে আমাদেরকে ভূমিকা রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পৃথিবীর কোনো ঘরই আমাদের জন্য স্থায়ী নয়। অতএব আখেরাতের স্থায়ী ঘর নির্মাণের জন্য আমাদেরকে ব্যাকুল থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনের সূরা আল কাসাসে বর্ণিত নির্দেশনার আলোকে জামায়াতের সহযোগিদের মাঠে ময়দানে ভূমিকা রাখতে হবে। আসুন দুনিয়ার অশান্তি থেকে বাঁচতে, আখেরাতের ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচার জন্য কালিমার বিধানের আলোকে আমাদের জীবন পরিচালনা করি।
অধ্যাপক মিয়া গেলাম পারওয়ার বলেন, আজ প্রায় তিন বছর পর আপনাদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ায় মহান রবের শুকরিয়া আদায় করছি। তিন বছর পর মুক্ত বাতাসে জুমার নামাজ আদায় করতে পারবো। আমি আপনাদের দোয়া নেয়ার জন্য আজকের প্রোগ্রামে শরিক হয়েছি। কারাবন্দী আমীরে জামায়াত আপনাদেরকে সালাম জানিয়েছেন। সকল জুলুমের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। হাজার হাজার সহযোগী সদস্য যদি ঠিক মতো দাওয়াতী কাজ করে তবে এদেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে যাবে। আল্লাহর দ্বীনকে বিজয় করার জন্য আমরা এ কাফেলায় শরিক হয়েছি। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সে পথে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, কুরআনের সাথে আমাদের নিজের জীবনকে মেলাতে হবে। কেয়ামতের কঠিন দিনে এই কুরআনই সুপারিশকারী হবে। ইসলামী আন্দোলনের সহযোগি সদস্য হিসেবে কুরআনের চর্চা কতখানি করতে পারছি তা অনুধাবন করতে হবে। আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত ও রাসুল সা. আদর্শ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। মক্কায় ১৩ বছর মানুষের মাঝে আল্লাহ রাসুল সা. ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ফলে অতি অল্প সময়ে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জামায়াত বাংলাদেশে একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আগামী দিনের ইসলামী বিপ্লব সাধনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণই হবে মূল বাতিঘর। জামায়াতের সহযোগী ভাইদের আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে মাঠে ময়দানে ছড়িয়ে পড়তে হবে। শুধু ত্রাণ বিতরণ নয় বরং অসহায় মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থাকতে হবে। অসহায় মানুষকে আর্থিক ভাবে উন্নয়ন করতে জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামের আদর্শ দিয়ে মানুষের মন জয় করে বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এদেশের মানুষকে আধিপত্যবাদ মুক্ত একটি উন্নত ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র উপহার দিবে ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইকামাতে দ্বীনের কাজ করা প্রত্যেক মুসলমানদের উপরে ফরজ। এর মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হতে চাই। এজন্য কুরআন ও হাদীস থেকে জ্ঞানার্জন করে আমাদের ব্যক্তি, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের বিধানকে অনুসরণ করতে হবে। ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য আমাদেরকে সমাজ পরিবর্তনের যতগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবেলা করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আজকে একটি মহল জামায়াতে ইসলামীর যে কোনো বৈঠককে রাষ্ট্র বিরোধী বৈঠক হিসেবে আখ্যায়িত করে। অথচ জামায়াতের বৈঠকে কুরআন ও হাদীসের আলোচনা হয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সামাজিক ও মানবিক কল্যাণে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সরকার আধিপত্যবাদের তাবেদারী করতে গিয়ে দেশের নিরাপত্তাকে চরম হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই নিজেদের জান-মালের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে জামায়াতের সহযোগী সদস্যদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।