বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, জামায়াত ও বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জেলে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। জনগণের অধিকার আদায়ে আজ সকল বিরোধীদল রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দেশের জনগণও বিরোধী দলের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এ অবস্থায় সরকার ভীত হয়ে বিরোধী মত দমনে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ও প্রশাসনকে লেলিয়ে দিয়েছে। জামায়াতসহ সকল বিরোধী দল ও মতের লোকদেরকে হত্যা করে শহিদ করা হচ্ছে। অসংখ্য ভাইদেরকে আহত করা হয়েছে। আজকে আমরা শহীদদের রুহের মাফেরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনায় দেশব্যাপি দোয়া কর্মসূচি পালন করছি। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সকল বিরোধীদল রাজপথে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের প্রশাসন ও তাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জনগণের শান্তিপূর্ণ অবরোধ, মিছিল, সভায় প্রকাশ্যে গুলি করছে ও হামলা চালাচ্ছে। গত ২৮শে অক্টোবরের থেকেই অব্যাহতভাবে ফ্যাসিবাদি কায়দায় বিরোধী মত দমনে উঠে পড়ে লেগেছে। মূলত ২৮শে অক্টোবর বিরোধী দল সমূহের মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি দেখে আওয়ামী সরকার বেশামাল হয়ে পড়েছে। সেই দিন থেকেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ও তাদের সরকার প্রশাসন নগ্ন ভাবে হামলা চালিয়ে দেশের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্ন ঘটাতে চেষ্টা করছে। মহাসমাবেশে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও অগ্নি সংযোগ করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষা করার পরিবর্তে মহাসমাবেশে যারা এসেছিল তাদেরকে পথে পথে বাঁধা দেওয়া এবং সর্বশেষ মহাসমাবেশে হামলা চালিয়ে এক ন্যাক্কারজনক উদাহরণ সৃষ্টি করা হল। সেই থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অব্যাহত গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে দেশে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহনমুলক নির্বাচনের আয়োজন করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চলমান এই যৌক্তিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করছে। জনগণকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই জালিম সরকার নিজেরা স্বাধীনতার কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে অথচ তাদের দ্বারাই এখন দেশ ও দেশের মানুষ পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ। গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পরে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, বিরোধী দলের মহাসমাবেশে হামলা ও পরিবেশ নষ্ট করতে সরাসরি আইনশৃংখলা বাহিনী জড়িত আছে। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলতে চাই, জনগণের দাবি আদায়ের এই আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করা ছাড়া আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
দেশে অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে। বিরোধী দল মতের নেতাকর্মীদের কারাগারে রেখে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদি কায়দায় আবারো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাগ্রহণ জনগণ হতে দেবে না। এই কয়েক দিনে আমাদের দশ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। জনগণ বুঝে গেছে এই আওয়ামী লীগ আসলে সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়। সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তারা চায় না। এজন্যই রাজপথে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা একটি পরিণতিতে পৌঁছাতে চাই। দেশের জনগণ আর এক মূহুর্তও আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। জনগণ দেখেছে কিভাবে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে তাদের মনোনিত সন্ত্রাসীদের তারা নির্বাচিত করেছে। জনগণ জানে নিজেরা সিল মেরে তারা সমাজের অনাকাঙ্খিত লোকদের নির্বাচিত করবে। জনগণের এক বিন্দুও বিশ^াস নেই এই আওয়ামী সরকারের প্রতি। সেজন্যই আমরা দাবি করে আসছি কেয়ারটেকার সরকার দিয়ে একটি একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। দেশের অন্যতম বড় দু’টি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জেলে থাকবে আর আপনারা নির্বাচন করে ফেলবেন এটা জনগণ এবার হতে দেবে না। এমতাবস্থায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। আমরা এক দফার লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছি, সরকারের পতন ছাড়া এই আন্দোলন আর থামবে না। আগামী ১২ ও ১৩ নভেম্বর চর্তুথ দফায় দেশব্যাপি অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমাদের অবরোধ চলছে চলবে। আমরা বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। তিনি চলমান আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে মহান রবের নিকট দোয়া করেন।
তিনি আজ ১০ নভেম্বর, শুক্রবার রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপি বিশেষ দোয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবরোধ চলাকালে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় ভার্চুয়্যাল দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও মজলিসে শূরা সদস্য নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, অবরোধ সহ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে আজকে জামায়াতের নেতাকর্মীসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের উপর বর্বর হামলা চালানো হচ্ছে, পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হচ্ছে। অন্যদিকে কর্মস্থল ও বাসা বাড়িতে গিয়ে জামায়াতসহ বিরোধী দল মতের লোকদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ গুলো তছনছ ও ধ্বংস করে দিচ্ছে। এভাবে তারা আমাদেরকে ভয় দেখাতে চায়। বাংলাদেশের সংবিধান সকলকে মিছিল, সভা করার, কথা বলার ও রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে অথচ এই ফ্যাসিস্ট সরকার অবৈধভাবে জামায়াতে ইসলামীকে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। জনগণ আজ জেগে উঠেছে তাদের ভয় দেখিয়ে আর লাভ হবে না।
তিনি বলেন, আমরা মজলুম আমরা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর যুগে যুগে মজলুমরাই দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এদেশে তার দ্বীনকে বিজয়ের জন্যই আমাদেরকে কবুল করেছেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার স্বাধীন ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে ইনশাআল্লাহ। এজন্য সাহসিকতার সাথে আমাদের ময়দানকে মোকাবেলা করতে হবে। চলমান অবরোধ সহ সামনের সকল কর্মসূচি সফল করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, অবরোধ সহ চলমান আন্দোলন সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতায় মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন করছে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের আন্দোলন চলছে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল নেতাকর্মী ও আলেম ওলামার মুক্তির জন্য। এই আওয়ামী সরকারের কাছে জনগণ, সংবিধান, জাতি ও দেশ কোনোটাই নিরাপদ নয়। সকল বিরোধী দল আজ ঐক্যবদ্ধ। অথচ আওয়ামী সরকার আবারো পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। বিরোধীদের আন্দোলন সংগ্রাম নসাৎ করতে গণগ্রেফতার, হামলা, খুন করা এবং বিচারের নামে মিথ্যা রায় দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমাদের আন্দোলন এদেশের মানুষের মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। ক্ষমতাসীন স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সকলকে অবরোধসহ চলমান আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
আব্দুস সবার ফকির বলেন, চলমান অবরোধ সহ কর্মসূচি পালনে আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এই আওয়ামীলীগ দ্বারা গঠিত সরকার অতীতে মাত্র ৩ মিনিটের ব্যবধানে দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছিল। তারা বলে লগি বৈঠা দিয়ে নাকি গণতন্ত্র নিয়ে এসেছে! এই আওয়ামী গোষ্ঠী লাগি বৈঠা নিয়ে মিছিল করেছিল। বিচার ব্যবস্থাকে প্রথম আওয়ামী লীগই লাথি মেরে অবমাননা করেছিল। তারা খুব ভালো করেই জানে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে গণতন্ত্রকামী ভালো মানুষের ফ্যাক্টরি। এজন্যই তারা আমাদের উপরেই সবচেয়ে বেশি হিংস্র আক্রোশ প্রকাশ করে থাকে।
অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী এদেশে কালিমার পতাকা উড্ডিন করতেই কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইসলামকে বিজয়ী করতে চাই।চলমান আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্ত বৃথা যাবে না। চলমান অবরোধ সহ আমাদের সকল আন্দোলন ন্যায়ের পক্ষে। রাতের বেলায় যারা ভোট চুরি করে তাদের বিরুদ্ধে। সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জেলে ভরে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বানিয়ে রায় দিয়ে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চায়। এবার আমরা জীবন দিয়ে হলেও এই সব ষড়যন্ত্র রুখে দিবো ইনশাআল্লাহ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, চলমান অবরোধসহ আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং যারা আহত হয়েছেন মহান আল্লাহ তাদেরকে শেফায়ে কামেলা দান করুন। মহান আল্লাহ বলেছেন, হতাশা নয় আমাদের এই কঠিন্যতা অচিরেই তিনি সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আজকে বাংলাদেশের জমিন আমাদের ঘামে, চোখের পানিতে ও রক্তে ভিজে উর্বর হয়েছে। এখানে আকিমুদ্বীনের দ্বীনের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। এদেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী উপহাস করে বলেন চার বার লিপস্টিক দেওয়ার কথা। মহামান্য বিচারকেরা বলেছেন দেশ জাহান্নামে চলে গেছে। জনগণ একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তামাশার তফসিল ঘোষণা করা হলে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে আছি সেই আন্দোলনকে সফল করেই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ।