বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তাদের মাগফিরাত কামনা করে বলেছেন, সাম্য, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমরা যে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল বাক-স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি অথচ এখনো আমাদের গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। স্বাধীনতা ছিল ঐক্যের অথচ আজ জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়েছে। বিভক্ত জাতিকে নিয়ে কখনো একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে আইনের শাসন আজ ভূলুণ্ঠিত, মানুষ নিরাপদ নয়, মৃত্যুর স্বাভাবিক গ্যারান্টি নাই, বাকস্বাধীনতা নাই, জাতির দর্পণ হিসেবে যারা কাজ করেন সেই সাংবাদিক সমাজও আজ বিপন্ন। সরকারের মদদে তাদের অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করা হচ্ছে, সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার প্রচেষ্টা চলছে। এমতাবস্থায় জনগণকে সাথে নিয়ে এই ফ্যাসীবাদী সরকারের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতা ও বিজয়কে অর্থবহ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মন্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহঃ সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলওয়ার হোসাইন, আব্দুল জব্বার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ড. আব্দুল মান্নান, আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আমিনুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আশরাফুল আলম ইমন, শাহীন আহমদ খান ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পুর্বের সভাপতি ছাত্রনেতা হাফিজুর রহমান প্রমূখ।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, সরকার ফ্যাসিবাদি কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালনা করছে ফলে জনগণ স্বাধীনতার সুফল হতে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়েও কঠিন হলো স্বাধীনতা রক্ষা এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বিভেদের রাজনীতির কারণে আমরা আজও সে লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারিনি। স্বাধীনতাযুদ্ধের রণাঙ্গনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল আজকে তাদেরকে নিগৃহীত ও দেশ বিরোধী শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। দেশকে বিরাজনীতিকরণ ও বিরোধী দলকে ধ্বংস করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির ফলে আজ জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। ব্যাংকগুলো লুটপাটের কারণে দেওলিয়া হওয়ার পথে। ক্ষমতাসীনদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফলে রাষ্ট্র পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে দেশকে রক্ষা করতে, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রত্যেক নাগরিককে একজন বলিষ্ঠ বিপ্লবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। দেশপ্রেম ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গঠন করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হবে।
মন্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে লাখো প্রাণের বিনিময়ে বিজয় দিবসের এই দিনে দেশ শত্রু মুক্ত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ৪৯ বছরেও এদেশের মানুষের মুক্তি সম্ভব হয়নি। এখনও দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী। বাকশাল ও নব্য স্বৈরাতন্ত্রের কবলে পড়ে আজ গণতন্ত্র মৃত প্রায়। সমাজের শ্রেণী বৈষম্য দূর করতে হলে অসহায়, আর্ত-পীড়িত মানুষের কল্যাণে সবাইকে কাজ করতে হবে। ৭১ এর বিজয় কোন একক গোষ্ঠীর ছিলনা। এই বিজয় ছিল দেশের আপামর জনতার। তাই বিজয়ের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দারিদ্র ও ক্ষুধা মুক্ত, সুখী-সম্দ্ধৃ সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে নিপীড়ন-নির্যাতনের পথ থেকে সরে এসে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে সহনশীলতার রাজনীতি চর্চা করতে হবে। অন্যথায় মানুষের মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে আরো একটি যুদ্ধের জন্য জাতিকে প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।