বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস’। আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। অথচ জাতি আজ এমন এক সময় মহান বিজয় দিবস পালন করছে, যখন দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসিবাদী আচরণে বিজয় ও স্বাধীনতার মূল অর্জন গণতন্ত্রকে হারিয়ে দেশ আজ অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করেছে। দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী বিভেদ, অনৈক্য এবং ‘সংকীর্ণ’ আচরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় অগ্রগতির পথে ‘প্রতিবন্ধকতা’ সৃষ্টি করছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস, খুন, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব-মানচিত্রে এক রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় জাতির পরিত্রাণের জন্য দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে মুক্তিকামী জনগণ আজ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে লড়াই ও সংগ্রামে অবতীর্ন হয়েছে। তিনি সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশবাসীকে মুক্তিকামী জনগনের পাশে থাকার উদাত্ত্ব আহ্বান জানান।
এসময় ড. মাসুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী ও অপরিসীম ত্যাগ স্বীকারকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সকলের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আজ শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব একথা বলেন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামসুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা ল’ইয়ার্স ফোরামের সভাপতি এডভোকেট কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য আবদুল জব্বার, মহানগরীর শুরা সদস্য ও কদমতলী পূর্ব থানা আমীর মাও. আমিরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ড. মাসুদ বলেন, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু মহান বিজয়ের ৪৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার সংবিধান স্বীকৃত হলেও ক্ষমতাসীন দল তা হরণের মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে দেশে জুলুমতন্ত্র ও ফ্যাসীবাদী শাসন কায়েম করেছে। এ সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠান সমুহকে ধ্বংস করেছে। দেশের অর্থ ও সম্পদ বিদেশে পাচার করছে। অথচ এখনও ক্ষুধা, দারিদ্র ও বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। দেশে মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা নেই। সরকার ইতোমধ্যেই বেশকিছু গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। বিরোধী মতকে দমনের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গায়েবী মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। যার ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ এখন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তকমা পেয়েছে। যা এ দেশের মানুষের জন্য চরম অবমাননাকর। তিনি দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষনা করেন দলন-পীড়ন চালিয়ে অতীতে কোন স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি, ফলে ক্ষমতাসীন অপশক্তিরও শেষ রক্ষা হবে না।
ড. মাসুদ আরও বলেন, গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্য মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের মূলমন্ত্র হলেও প্রতিহিংসা ও অপরাজনীতির কারণে আজও আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। তাই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং দেশকে একটি সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও ইনসাফপুর্ণ শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সময়ের দাবি। অথচ সরকার নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করনের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ২০১৪ সালের মত আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করে তাদের ক্ষমতাকে দির্ঘায়িত করতে চাই। কিন্তু দেশের মানুষ সরকারের সেই ষড়যন্ত্র কখনই সফল হতে দেবে না। তিনি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে অবৈধ ও জুলুমবাজ আওয়ামী অপশক্তির পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার কায়েমের জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।