বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া আওয়ামী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন অন্যথায় দেশের জনগণ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে ৭ নভেম্বরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে রাজপথের আন্দোলনে আপনাদেরকে বাধ্য করবে। তিনি আরোও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বাকশাল চায়নি বলেই ৭ নভেম্বর সৃষ্টি হয়েছিল। ৭ নভেম্বর পরবর্তী সিপাহী-জনতার সরকার ক্ষমতায় এসে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে জাতিকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের সভা সমাবেশ সংগঠন করার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। অন্যদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসে আবারো পূর্বের ন্যায় অঘোষিত ভাবে দেশে বাকশাল কায়েম করেছে। তাই দেশ, জাতিসত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই অগণতান্ত্রিক শক্তির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সকলকে জেগে উঠে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুস সবুর ফকিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জামায়াত নেতা এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহী জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে পরিচালিত আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্র ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু-আকবার’ ধ্বনিতে মোকাবেলা করেছিল। তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দিয়ে এবং নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য মানুষের বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। আওয়ামী বাকশালী সরকার অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী পন্থায় মানুষের ন্যায় সঙ্গত প্রতিবাদের উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। এ অবস্থায় স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় দেশ প্রেমিক সৈনিক ও জনতার ঢল নামে রাজপথে। এক অনিশ্চিত ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে সিপাহী জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করে দেশের জনগনকে মুক্ত করেছিল। আজও দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি মহল প্রভুত্ব কায়েম করতে চায়। তাই ৭ নভেম্বরের চেতনায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের জনগণকে আবারো ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে নির্বাসিত করে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ৫ জানুয়ারির তামাশা ও ভাঁওতাবাজির নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় এসে নতুন করে খুন, গুম অপহরণ ও গুপ্তহত্যা সহ নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হয়। আইনের শাসনের পরিবর্তে রাজনৈতিক হয়রানীর মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলা, গণগ্রেফতার ও নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। তারা কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে প্রহসন করে জাতীয় নেতাদের একের পর এক নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যই সংবিধানের নামে রাজনৈতিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এ থেকে মুক্তির জন্য সর্বাগ্রে দরকার সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। অথচ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, এই সরকারের অধীনে কোন প্রকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। তাই নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংলাপের পাশাপাশি রাজপথে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ শান্তিপূর্ণ দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।