আকিদার ক্ষেত্রে জামায়াতের বিরুদ্ধবাদীরা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে সমাজে। এক শ্রেণির তথাকথিত আলেম জামায়াতের আকিদা খারাপ এই নিয়ে প্রায়ই সমালোচনায় মুখর হন। তবে জামায়াত একটা দারুণ কাজ করেছে। তারা তাদের আকিদা পরিপূর্ণভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে। আমরা দেখে নিই আসলে জামায়াতের আকিদা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা?
জামায়াতে ইসলাম তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতির মধ্যে লিখেছে তাদের বুনিয়াদি/ বেসিক আকিদা হলো
১.আল্লাহ্ তা’আলাই মানব জাতির একমাত্র রব, বিধানদাতা ও হুকুমকর্তা।
২. কুরআন ও সুন্নাহ্ই মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
৩. মহানবী সা.-ই মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য আদর্শ নেতা।
৪. ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই মুমিন জীবনের লক্ষ্য।
৫. আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও আখিরাতের মুক্তিই মুমিন জীবনের কাম্য।
জামায়াত তার গঠনতন্ত্র বা সংবিধানে ডিটেইল আকিদা উল্লেখ করেছে ২ নং ধারায়। সেখানে তারা বলেছে তাদের আকিদার মূলকথা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। কালেমা তাইয়্যেবার বেসিক ব্যাখ্যা হলো, সকল বিধান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনিই সকল সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আর যেহেতু আল্লাহর মনোনীত রাসূল হলেন মুহাম্মদ সা.। সুতরাং তাঁর কথা ও কর্মকে অনুসরণ করতে হবে।
জামায়াত বলেছে কালিমা তাইয়্যেবাকে মেনে নেওয়া মানে নিচের বিষয়গুলোও মেনে নেওয়া।
১। আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা মনে না করা।
২। আল্লাহ ছাড়া কাউকে কল্যাণের কারণ ও আল্লাহ ছাড়া কাউকে বিপদদাতা মনে না করা।
৩। আল্লাহ ছাড়া কারো নিকট দোয়া, প্রার্থনা ও আশ্রয় খোঁজা যাবে না।
৪। আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করা যাবে না।
৫। আল্লাহ ছাড়া কারো কাউকে সার্বভৌমত্বের মালিক মনে করা যাবে না।
জামায়াত বলেছে এর পাশাপাশি নিন্মোক্ত বিষয়গুলোও মেনে নিতে হবে।
১। নিজেকে স্বাধীন ইচ্ছার মানুষ মনে করা যাবে না। সর্বদা আল্লাহর দাস হিসেবে নিজেকে ভাবতে হবে।
২। নিজেকে কোনো কিছুর স্বাধীন মালিক মনে করা যাবে না। যেমন নিজের জীবন, অঙ্গ, দৈহিক শক্তির একান্ত মালিক নিজেকে মনে করা যাবে না। এগুলো আল্লাহর মালিকানাধীন ও তাঁর থেকে আমানত প্রাপ্ত।
৩। সব কিছুর জন্য আল্লাহর নিকট দায়বদ্ধ থাকার চিন্তা করতে হবে।
৪। আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দকেই নিজের পছন্দ-অপছন্দ বিবেচনা করতে হবে।
৫। আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই সকল কর্ম-তৎপরতার লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
৬। আল্লাহর দেওয়া বিধানের বিপরীত সবকিছু প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
জামায়াত বলেছে এই বিষয়গুলোর পাশাপাশি কিছু কর্তব্যও রয়েছে।
১- মুহাম্মদ সা. থেকে প্রামাণ্যসূত্রে প্রাপ্ত সকল বিধান দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করতে হবে।
২- আল্লাহ ও মুহাম্মদ সা. থেকে প্রাপ্ত আদেশ ও নিষেধকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিতে হবে।
৩- আল্লাহ ও মুহাম্মদ সা. ছাড়া অন্য কারো নিরঙ্কুশ আনুগত্য করা যাবে না। বরং অন্য যে কাউকেই শরিয়ত দিয়ে বিচার করতে হবে।
৪- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসার চাইতে অন্য কাউকে বেশি ভালোবাসা যাবে না।
৫- মুহাম্মদ সা. ছাড়া অন্য কারো আনুগত্যের ব্যাপারে এমন মর্যাদা পোষণ না করা যে, তার আনুগত্য করার সাথে ঈমান ও কুফর ফয়সালা জড়িত।
এই হলো জামায়াতে ইসলামের আকিদার সার-সংক্ষেপ। আমি যা বুঝেছি তাদের গঠনতন্ত্র পড়ে তা সংক্ষেপে উল্লেখ করেছি। আমি মনে করি জামায়াতের এই আকিদা আলাদা কোনো আকিদা নয় বরং সকল মুসলিমেরই এই আকিদা বিশ্বাস পোষণ করা উচিত।
অনেকে মনে করেন বা অভিযোগ করে বলতে চান, জামায়াত যেহেতু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি করে ও নির্বাচন করে অতএব জামায়াত জনগণকে সার্বভৌম মনে করে। না, জামায়াত তা মনে করে না। জামায়াত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই মনে করে।
আর এই জন্য বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকার আদালতকে ব্যবহার করে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে রেখেছে। জামায়াত বলেছে সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ তায়ালা, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক দেখিয়ে জামায়াতের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করেছে।
গণতন্ত্রকে জামায়াত নেতা নির্বাচনে টুলস এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের টুলস হিসেবে ব্যবহার করে। যেভাবে আল্লাহর রাসূল সা. শিখিয়েছেন শুরার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে, ঠিক সেভাবে। জামায়াত কখনোই জনগণের বা সংখ্যাধিক্যকে সার্বভৌম মনে করে না। জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার হরণ হলেও জামায়াত আল্লাহর নাফরমানীমূলক এই বিষয়ে আপোষ করবে না। ইনশাআল্লাহ।
যারা এখনো জামায়াতে ইসলামে যোগ দেননি, আমরা তাদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা হাতে হাত রেখে দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব পালন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন, আমাদের সঠিক পথ অনুসরণের তাওফিক দান করুন।
যারা জামায়াতের আকিদা পড়তে চান তাদের জন্য কমেন্টে লিংক দেওয়া রয়েছে।
জামায়াতকে জানুন। জামায়াতে যোগ দিন।
#গণসংযোগ_পক্ষ
#১মার্চ_১৫মার্চ