বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌছে দিতে হবে। পাড়া প্রতিবেশী, সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন কেউই আমাদের দাওয়াতের বাইরে থাকবে না। আর সর্ব প্রথম দাওয়াত হবে নিজের নফসের প্রতি। আমাদের কথা ও কাজে যেন কোন অমিল না থাকে। যেটা মানুষকে করতে বলবো, সেটা যেন আমি নিজে আগে আমল করি। ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি জনশক্তির কথা-বার্তা, লেনদেন, সামাজিক কাজকর্ম আল্লাহর দ্বীন অনুযায়ী বা কুরআন অনুযায়ী হতে হবে। যতই বাঁধা আসুক আমরা ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাড়াতে হবে। জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দাওয়াত কার্যকর হবে।
তিনি আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনলাইন মাধ্যম জুম, ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভ এ ঈদ পুনর্মিলনি ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধনে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মোঃ নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনজুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো: সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। আরও বক্তব্য রাখেন শহীদ পরিবারের সদস্য মামুন আল আজমী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, আলী আহমদ মাবরুর, হাসান ইমাম ওয়াফি, হাসান জামিল, মাসুদ সাঈদী, মোহাম্মদ বিন কাসেম সালমান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সাইমুম ও মহানগর শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, রাজপথে মাঠে ময়দানে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা আন্দোলনের লড়াকু, সংগ্রামী ও একনিষ্ঠ সহযোদ্ধা তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। বিপ্লবী ও সাহসী জনশক্তি তৈরি করতে নেতৃবৃন্দের সহবতের বিকল্প নেই। তাই আমাদের অনলাইনের পরিবর্তে প্রকাশ্যে প্রোগ্রাম করতে হবে। অনলাইনে আরামপ্রিয় জনশক্তি তৈরি হবে, আল্লাহ দ্বীন বিজয়ের জন্য বিপ্লবী কর্মী তৈরি হবে না। ইকামতে দ্বীনের কাজকে ভালোভাবে বুঝে ময়দানে ভুমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যেক জনশক্তির ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের মানুষের মাঝে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত তথা জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। গত জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেনি। জামায়াতের নির্বাচনী তহবিলের এই টাকা জনকল্যাণে ব্যয় করা হবে। ব্যাপকভাবে সামাজিক কার্যক্রম চালাতে হবে। আমাদের হালাল রুজির উপরে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আল্লাহ তায়ালা যে তাকওয়া অর্জনের জন্য রোযা ফরজ করেছেন। সেই শিক্ষাকে ধারন করতে হবে। অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজানে বেশী আমল করা হয়েছে। সেটা ধরে রাখতে হবে। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কুরআন বুঝে বেশী বেশী তেলাওয়াত করতে হবে। ইসলামের দাওয়াত ঢাকা মহানগরীর প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌছে দিতে হবে। আল্লাহর তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পদচারনায় প্রত্যেক অলিগলি মুখরিত রাখতে হবে। দাওয়াতী পক্ষে ব্যাপকভিত্তিক দাওয়াতী কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রমজানের প্রকৃত শিক্ষাকে আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। যারা রমজানে তাকওয়া অর্জনের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন মুলত তাদের জন্যই ঈদের আনন্দ। আমীরে জামায়াতের ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে ১৫ দিনব্যাপী গণসংযোগ পক্ষ চলবে। এদেশে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ব্যপকভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। গণসংযোগ পক্ষে গ্রুপ ভিত্তিক দাওয়াতি কাজে দাওয়াতি বই ও উপকরণ নিয়ে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে কুরআনের দাওয়াত নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই আমরা সত্যের স্বাক্ষী হতে পারবো। সমাজের তৃণমূল থেকে সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে নিয়ে আসতে হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তিনি শহীদ নেতৃবৃন্দের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য জামায়াতের কর্মীদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, তাকওয়া অর্জনের মূল লক্ষ্যই হল দ্বীনকে বিজয়ী করার আন্দোলন সংগ্রামে উত্তীর্ণ হওয়া। দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ইবাদত। আজকে বাংলাদেশের এই জমিনে জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য ভাই শহীদ হয়েছেন জীবন দিয়েছেন। সেই জমিনে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়েই আমরা সত্যিকার অর্থে সামনে ঈদ উদযাপন করবো ইনশাআল্লাহ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতকে রাজধানীতে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করতে গণসংযোগ পক্ষকে কাজে লাগাতে হবে।
এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ইকামাতে দ্বীনের কাজ নবী রাসুলরা করেছেন, এই কাজ আমাদেরকেও করতে হবে। পরকালে নাজাত পেতে ইকামাতে দ্বীনের বিকল্প নেই। গণসংযোগ পক্ষে প্রত্যেক মানুষের মাঝে কুরআনের দ্বীন কায়েমের দাওয়াত দিতে হবে। যত বাঁধা আসুক আমরা ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। আমাদের অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানবিক আচরণের মাধ্যমে সকলকে আপন করে নিতে হবে।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের দোশরেরা আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ তিন শতাধিক নেতা কর্মীকে হত্যা করেছে। তারপরও আমাদের আন্দোলনকে থামাতে পারেনি। আমরা আমাদের ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমরা যে আন্দোলনে সম্পৃক্ত আছি তা আমাদেরকে ইহকালীন ও পরোকালিন মুক্তির পথ দেখায়। সেখানে ব্যক্তি হিসেবেও আমাদের নিজকে পরিপূর্ণ ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকে পরিণত হতে হবে। এদেশে ইসলামকে বিজয়ী করতে সামাজিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ঈদের আগে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েলের বিমান কেন অবতরণ করেছে তার জবাব সরকারকে দিতে হবে। এ ঘটনায় জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বিরোধী চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।
মু. সেলিম উদ্দিন বলেন, যারা তাকওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য ঈদের আনন্দ। রমজানের তাকওয়ার ভিত্তিতে গণসংযোগ পক্ষ পালন করতে হবে। একজন ঈমানদার হিসেবে সত্যের দাওয়াত সবখানে পৌঁছানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।