বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে পৃথিবীর জীবনেই সবকিছুই শেষ নয় বরং মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে আখেরাতে চিরস্থায়ী সফল হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। রুহের জগৎ হতে আমরা প্রত্যেকে দুনিয়ায় এসেছি পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনে। সে পরীক্ষায় ব্যর্থতা যেন আমাদের জাহান্নামের অধিবাসী না করে দেয়। ইকামতে দ্বীনের ফরজ আন্দোলনে সক্রিয় থেকে দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদের পরোকালীন সফলতা ও মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র পর্যায়ে ইসলামের বিধানকে কায়েম করতে হবে। আজ সমাজের সর্বত্রে অন্যায় জুলুম অত্যাচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা নেই। মানুষ তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমনকি বর্তমান বাংলাদেশে কথা বলার স্বাধীনতাও হরণ করা হয়েছে। যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করারও স্বাধীনতা নেই। জামায়াতে ইসলামীর ওয়ার্ড সভাপতি ও সেক্রেটারি হিসেবে আমাদেরকে সেই সমাজ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ওয়ার্ড সভাপতি ও সেক্রেটারি শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. মো. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রটারি যথাক্রমে মুহা. দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান ও আব্দুল্লাহ ফাহিম সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, দেশ আজ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। দেশের সাধারণ জনগণের জান-মাল ও ইজ্জতের কোনো নিরাপত্তা নেই। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে মানুষ আজ চরম অসহায় অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশপ্রেমিক জনগণ সোনালী দিনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে। কিন্তু আওয়ামী গোষ্ঠী বিরোধী দল ও মতের মানুষের উপরে জুলুম নির্যাতন করার পাশাপাশি মিথ্যা দোষারোপ চাপিয়ে জনগণকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের মুক্তির জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাতিত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে না। এজন্য রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পরকালের জবাবদিহিতা নিয়ে ইকামাতে দ্বীনে কাজ করতে হবে। মুমিনের পরকালের জীবনের সফলতায় প্রকৃত সফলতা। ইসলামী অন্দোলনের ক্ষেত্রেও ওয়ার্ড সভাপতি ও সেক্রেটারিদের দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করা হবে। সবাই তার দায়িত্বের সঠিক জবাবদিহির মাধ্যমে নাজাত লাভ করতে হবে। আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করে ইকামাতে দ্বীনের কাজ করে যেতে হবে। মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে কুরআনের বিধানকে অনুসরণ করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে দায়িত্বশীল ভাইদের কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে নিজেদেরকে মানসম্পন্ন নেতৃত্বে পরিণত করার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার পরিবর্তন সাধন করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সত্যিকার ভাবে তারাই সফল হয়েছে যারা নিজেদের নফসকে পরিশুদ্ধ করতে পেরেছে। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের যাবতীয় কর্মতৎপরতা ও প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শপথের হক অনুযায়ী কাজ করতে হবে। জনশক্তিদের প্রতি ইনসাফ ও তাদের হক রক্ষা করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কাজ, ইকামাতে দ্বীনের কাজ এবং জিহাদ ফি সাবিল্লিাহ কাজকে সব কিছুর উপরে স্থান দিতে হবে। মহানগরীর প্রত্যেক এলাকায় ইউনিট কায়েম করতে হবে। মহল্লা কমিটি গুলোকে আরও সু-সংগঠিত করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা চাইলে চরম ও কঠিন অবস্থার পরেও আমাদেরকে সহজ ও স্বাভাবিক পরিবেশ উপহার দিতে পারেন। নিজেদের আত্নশুদ্ধির জন্য ব্যক্তিগত ইবাদত বাড়াতে হবে। আগামীদিনে ইসলামী আন্দোলনের মূলক্ষেত্র হিসেবে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণকে প্রস্তুত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি দায়িত্বশীলদের প্রতি উদাত্ব আহবান জানান।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইসলামী আন্দোলন হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্র গঠনের উপায়, এটা আমাদের জন্য একটি বিরাট নিয়ামত। আনুগত্য ব্যতিত মুমিন জীবনে সফল হতে পারে না। আজ বাংলাদেশে রাজনীতিকে পরিকল্পিত ভাবে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থা বেশীদিন চলতে পারে না। জামায়াতসহ বিরোধী দলের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আজ সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। জালিম সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষ রক্ষা এবং নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে।বতিনি সবাইকে নবী-রাসূল ও সাহাবীদের ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অনুসরন করে ময়দানে দৃঢ়তা অবলম্বনের আহবান জানান।