ফ্যাসিষ্ট সরকারের সকল ধরনের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে অধিকার আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত রাখুন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, সরকার আবারো যেনতেনভাবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করতে চায়। কাকে কোন আসন থেকে বিজয়ী করা হবে সেই তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। জনমতকে পদদলিত করে যা ইচ্ছা তাই করতে চায় আওয়ামী সরকার। জনগণ সরকারের এই স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়ন করতে দিবে না। জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করুন, ভোট দান থেকে বিরত থাকুন, নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। গণবিরোধী এই সরকারের নির্বাচনে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবেন না। তিনি ফ্যাসিষ্ট সরকারের সকল ধরনের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণআন্দোলনে অংশ হিসেবে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন ও ভোট দান থেকে বিরত থাকার আহবানে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ড. মোবারক হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামরুল আহসান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য শাহীন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমন, এডভোকেট মাহফুজুল হক চৌধুরী, মোতাসিম বিল্লাহ প্রমুখ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ কঠিন সংকটে নিমজ্জিত। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি বৈঠার তান্ডবের মধ্য দিয়ে ১/১১ সরকার ক্ষমতায় আসে। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়ার শর্তে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। সভা সমাবেশ, মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে নতুন প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবীদার এই সরকার। দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যার মধ্য দিয়ে বিডিআর ধ্বংস করে সীমান্ত অরক্ষিত করে দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে মাঠ ফাঁকা করতে চাচ্ছে। তারা রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, সকল দলের অংশগ্রহণে দেশে অর্থবহ নির্বাচনের পরিবর্তে আওয়ামী ডামি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। তারা ডামি দল ও ডামি প্রার্থী তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ঠুটু জগন্নাথে পরিণত করা হয়েছে। তারা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালের নামে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১০জন নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ২৫১ জন নেতাকর্মীকে হত্যা, হাজার হাজার মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে ঘর ছাড়া করা হয়েছে। কারাবন্ধী করা হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশী বন্দী রাখা হয়েছে। গত ১৫ বছর মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার বঞ্চিত হয়েছে। তিনি সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গ্রেফতার এবং অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য ঢাকাসহ দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, দেশের জনগণ আর আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই স্বৈরাচারি, জালিম সরকারের পতন নিশ্চিত করে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জনগণ এই সরকারের সাথে নেই। তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। যেনতেন ভাবে নির্বাচন করার দু:স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়। তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাই এর একমাত্র সমাধান। সবাইকে আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান।