এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু মশার প্রাদুর্ভাবে ১৩ জুলাই হতে ২৯শে জুলাই পর্যন্ত পনের দিন ব্যাপী পক্ষ পালন উপলক্ষ্যে আজ ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় মশারী বিতরণ এবং নগর জুড়ে মশক নিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল। এসময় আরও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় এই এডিস মশা নিধনে ঔষধ স্প্রে ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ মশারী বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক, শেখ শরিফ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রহমান। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণে মজলিসে শুরা সদস্য শাহীন আহমদ খান, মাহফুজ আলম সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল মশক নিধন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে বলেন, আজ ১৩ জুলাই হতে আগামী ২৯ শে জুলাই পর্যন্ত আমরা পুরো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও মশক নিধন পক্ষ পালন করবো। এজন্য ঢাকা মহানগরীর প্রত্যেক সচেতন মানুষের সহযোগিতা আমরা চাই। এডিস মশা নিধন ও জনগণের মাঝে সচেতনা সৃষ্টির জন্য হাজারীবাগ এলাকায় আজকে আমরা সাধারণ মানুষের মাঝে মশারী বিতরণ করেছি। সেই সাথে জন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ করছি। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে আমরা নগরের এডিস মশা নিধনে ঔষধ ছিটিয়ে আমরা মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এই কারণে যে, বাংলাদেশের যেকোনো দুযোর্গ দুর্ভোগে জনগণের পাশে সবার আগে জামায়াতে ইসলামী ছুটে যায়। বর্তমান হাসপাতাল গুলোর দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মুখে। এই সংকট উত্তরণে সরকারী উদ্যোগের বিকল্প নেই। যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকে নজর দেওয়ার পরিবর্তে নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই ব্যস্ত। রাতের ভোটে নির্বাচিত বলেই জনগণের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার মানবসেবা ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজসেবা ও সমাজ সংস্কারের ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। দেশের জনগণ দেখেছে, বন্যা পরিস্থিতি, অগ্নিকান্ড, করোনা মহামারী সহ নানা দুর্যোগ সংকটে জনগণের কল্যাণে সংগঠনের কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশবাসী লক্ষ্য করছে প্রতি ঘণ্টায় ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী ঝঁকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতাল সমূহে ভর্তি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী সিট না পেয়ে হাসপাতালের সামনেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে দ্রুত সরকারের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে হাসপাতাল গুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণ যদিও মনে করে এই আওয়ামী লীগ পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার কারণে কখনোই জনদুর্ভোগে এগিয়ে আসবে না। সুতরাং আজকে দেশের জনগণের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে দেশের কল্যাণে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন অনিবার্য। এই পরিস্থিতিতে জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে দেশে কেয়ারটেকার সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জনগনের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বর্তমান অবৈধ, ফ্যাসিষ্ট সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। এই অপশক্তির হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণ বুঝে গেছে শেষ পদ্ধতি হিসেবে আওয়ামী সরকার জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণকে জিম্মি করে আবারো জোরপূর্বক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে রাখতে চাই। এ কারণে আওয়ামী সরকার ভীত হয়ে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সহ বরেণ্য আলেম ওলামাদেরকে সরকার দীর্ঘদিন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্র,
নৈরাজ্য ও অপতৎপরতা রুখে দিতে হবে। তিনি এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে মশা নিধনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রত্যেক এলাকায় আমাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া ও মৌসুমগত কারণে রাজধানীতে হঠাৎ মশার প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিঘ্ন ঘটছে। বিভিন্ন মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি এড়াতে সকলকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ নিজ ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। একইসাথে এসকল রোগের প্রতিরোধে ও মৃত্যু ঝুঁকি এড়াতে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
এড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আজ নগর জুড়ে ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সমগ্র দেশেই ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে। জনগণ জানে মহান আল্লাহ নমরুদের অপশাসন নির্মূল করতে মশা পাঠিয়ে ছিলেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে তাঁকালেও দেখা যায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সর্বত্র দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, জনগণের অর্থ বিদেশে পাচার সহ নানা অন্যায় জুলুম চলমান রয়েছে। জনগণ বিশ্বাস করে এসব পাপের কারণে হয়তো শাস্তি আসতে পারে। তবুও আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সচেতনা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।