বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে যেকোনো পরিস্থিতিতে জামায়াতের দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বর্তমান আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করে এদেশের বিশ কোটি জনগণের উপরে নিপীড়ন চালাচ্ছে। দেশের আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। আজ দেশের বিচার ব্যবস্থা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। বিচারকদের ন্যায়বিচার করার কোনো স্বাধীনতা নেই। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ আজকে একটি অবরুদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী পশ্চিম অঞ্চলের উদ্যোগে শুক্রবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত অগ্রসর কর্মী শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কর্মী শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী আমীর মুহা. আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, যাত্রাবাড়ী পশ্চিম জোনের সম্মানিত পরিচালক মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসাইনের সভাপতিত্বে কর্মী শিক্ষাশিবিরে অত্র জোনের সকল থানা আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর অফিস সমূহ জোরপূর্বক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জাতীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যেক নেতাকর্মীর নামে অসংখ্য মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে, গ্রেফতার করে, জুলুম-নির্যাতন ও হয়রানী করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যহত করা হয়েছে। সমাজের নম্র ও ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত এসব ব্যক্তিদেরকে নিজ ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী, কর্মক্ষেত্র সহ পদে পদে নিষ্ঠুর অমানবিক নির্যাতন করে তাদেরকে চরম আর্থিক ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবুও ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত প্রদান ও মানবতার সেবা থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিচ্যূত করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম বিপর্যস্ত, এখানে গণতান্ত্রিক যতোগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোকেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের কথা বলার অধিকার হরণ করা হয়েছে। সকল রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। দেশে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। জনগণের পছন্দের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার যে নির্বাচনের ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানকার কমিশনার সহ তা সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। তাই জনগণের মুক্তির জন্য, নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য এবং দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে যেকোনো পরিস্থিতিতে জামায়াতের দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব মোড়লেরা ইসলামী আদর্শ ও কুরআনের বিধান মোতাবেক দেশ পরিচালনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। গোটা দুনিয়ায় কোথাও ইসলামী আদর্শের উত্থান হোক, এটা এসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্র চাই না। অন্যদিকে ইসলামী অনুশাসনের ভিত্তিতে বিশ্বের কোন দেশে সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক এটা বিশ্ব মোড়লেরা হতে দিবে না। সেখানে বহুবিধভাবে পরিকল্পনা করে সত্যিকার দেশপ্রেমিক সরকারকে বিপদে ফেলা এবং ইসলামী আদর্শের সংগঠন বা ব্যক্তিদের টার্গেট করে নিয়ন্ত্রণ করার নানাবিধ ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এরপরও আমরা থেমে যেতে পারিনা এবং থামতে চাইও না। এজন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের রাজধানীর প্রত্যেক মহল্লায় মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। মানবতার সেবা ও ব্যাপকভাবে কল্যাণকর সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে জামায়াতের পতাকাতলে সম্পৃক্ত করে গণভিত্তি অর্জন করতে হবে।
মুহা. আব্দুল জব্বার বলেন, আল্লাহর গোলাম হিসেবে আমাদেরকে কুরআন ভালোভাবে জানতে হবে এবং তা সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম যে আদর্শ পৃথিবীতে কায়েম করার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন বাংলাদেশের বুকে সেই একই আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ জামায়াতে ইসলামী করে যাচ্ছে। আদর্শবাদী দলের পতাকাবাহী হওয়ার কারণে জামায়াতের দায়িত্বশীলদের একটি আদর্শবাদি দলের পতনের কারণ সম্পর্কে নিবিড় জ্ঞান রাখতে হবে এবং তার প্রতিকারের জন্য কাজ করতে হবে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াতের অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দি রয়েছেন তবুও কারো সাথে আপোষ করেননি। শত জুলুম ও অত্যাচারের মাঝেও আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে দ্বীনের এ মহান কাজকে আঞ্জাম দিতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, লক্ষ্যহীন জীবন নিয়ে আমাদের মুক্তি মিলবে না বরং তা দিয়ে সোজা জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যাবে। হজ্বে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে আমরা শয়তানকে পরাজিত করতে চাই অথচ আমার আপনার মনের কোণে যে শয়তান বদ্ধমূল হয়ে বসে আছে তাঁকে একটি বারের জন্যও পাথর মারার পরিকল্পনা কেন আমরা করছি না। আমরা অশ্লীলতার কাছে হার মানবো, সুদের কাছে হার মানবো, সামান্য ঘুষের কাছে হার মানবো, এসব মানবরোচিত সব মতবাদের কাছে হার মানবো, এরপরও কিভাবে আমরা দাবি করতে পারি আমি মুসলমান বা ঈমানদার। ফিরে আসুন ঈমানের পথে, কল্যাণের পথে, তবেই মিলবে মুক্তির শেষ ঠিকানা প্রিয় জান্নাত।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মোবারক হোসাইন বলেন, শিক্ষাশিবিরে আগত সকল কর্মী ভাইয়েরা নিজেদের মান উন্নয়ন করে সংগঠনকে মজবুত করার মাধ্যমে আমাদেরকে দেশের সামগ্রিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সকলের কাছে জামায়াতের আহবান পৌঁছাতে হবে। সমাজের গঠনমূলক প্রতিটি কাজে জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হতে হবে। পরামর্শের ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালনা ও জনশক্তির মাঝে চিন্তার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জনগণের কল্যাণে গণমুখি নেতৃত্ব অপরিহার্য ফলে গণমুখি নেতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।