সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানী ঢাকার নগর জীবনে প্রকট জলাবদ্ধতা নেমে আসে। লাখ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। রাজধানীর খাল ও ড্রেনগুলোর মধ্যদিয়ে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নালা নদর্মা ও রাস্তাঘাটগুলো নিয়মিত পরিষ্কার ও পানি সরে যাওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই প্রচন্ড জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিশেষকরে রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ি ও কদমতলী থানার বড়ভাঙ্গা, ডগাইর বাজার, সানারপাড়, হাজীনগর, মোহাম্মদবাগ চৌরাস্তা, জুরাইন রেলগেট, মেরাজনগর, মুরাদপুর, খালপাড় রোড এলাকা মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যথাযথ দায়িত্ব পালন করলেই জনগণের দুর্ভোগ দূর হতো। অথচ সরকার ও প্রশাসন কি দায়িত্ব পালন করছে তা জনগণের বোধগম্য নয়। পানি নিষ্কাশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে চরম সমন্ধয়হীনতার জন্য সরকারের ব্যর্থতাই দায়ী। অবিলম্বে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করার দাবি জানিয়ে এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
বিবৃতিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বর্ষণের ফলে রাজধানীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে রাস্তাঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। সীমাহীন কষ্টের মাঝে এলাকাবাসীকে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। মহানগরীতে এমনিতেই যানজটের কারণে নগরবাসী অতিষ্ঠ, সেখানে জলাবদ্ধতা জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের যাতায়াত, অফিস-আদালত ও কর্মক্ষেত্র যাতায়াতসহ সর্বক্ষেত্রে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছর রাজধানীর নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলন করা হলেও পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বিগত দিনগুলোতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের উদ্যোগ তেমন কার্যকর হয়নি। জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও ক্ষমতাসীনরা খাল ও নালা নর্দমা সংস্কারসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি কোটি টাকা খরচের হিসেব দিয়ে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করছে।
নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, প্রতিবছরই বৃষ্টির পানিতে রাজধানী তলিয়ে গেলেও কেউই এর জন্য এককভাবে দায় নিতে চায়না। পানিবদ্ধতা নিরসনে নিয়োজিত সংস্থাগুলো একে অপরের উপর দোষ চাপিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে। বিশেষ করে ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, ঢাকা জেলা এর মধ্যেই টানাপোড়েনটা বেশী। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে পানি নিষ্কাশনের ২৬টি খালই দখল ও ভরাট হয়ে আছে। বছরের পর বছর শুধু খাল উদ্ধার আর পরিস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয় পরে সেগুলো ভেস্তে যায়। ৯টি বড় বক্স কালভার্ট খুলে আগের অবস্থায় খালগুলো নেওয়াও সম্ভব হয়নি। ড্রেন ও নর্দমা নির্মাণ ও পুরনো নর্দমা পরিষ্কারের কার্যকর কর্মসূচিও তেমনভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রাজধানীর জলাবদ্ধতা দুরীকরণে পানি নিষ্কাশনের ২৬টি খাল ও নালা-নর্দমা সংস্কার, সুয়ারেজ লাইন থেকে ময়লা পানি উপচে পড়া রোধে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পুনর্গঠন, বুড়িগঙ্গা নদীর ড্রেজিং, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
রাজধানী ঢাকার সংকটের শেষ নেই, একটি সমস্যা অন্যটিকে ত্বরান্বিত করছে। আজ রাজধানীবাসী ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। যানজটে থমকে যাচ্ছে নগরী এবং মানুষের জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে মূল্যবান সময়। বিদ্যুৎ সমস্যা চরমে পৌঁছেছে, গ্যাসের সংকট, মশার উপদ্রব, বেশিরভাগ এলাকায়ই খাবার পানির তীব্র সংকট। মানুষ খাবারের পানির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছে, তবুও মিলছে না পানি, ফলে প্রতিনিয়ত পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। চিন্হিত সমস্যা সমুহের আশু সমাধান করে রাজধানীকে বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, ওয়াসাসহ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান সমূহকে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।