সিরাতুন্নবী (সা) উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৫ নভেম্বর শুক্রবার একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে সকল থানা সমূহের সংগঠনের কর্মী ও সহযোগীদের নিয়ে সিরাতের উপর সকাল ১০টায় ‘খ’ গ্রুপের এই বই পাঠ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কয়েক হাজার কর্মী-সহযোগী জনশক্তি অংশগ্রহণ করে।
প্রতিযোগিতা চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন হল কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং পরীক্ষার্থীদের সার্বিক খোঁজখবর নেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি জননেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা হল কেন্দ্র পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি যথাক্রমে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ও দেলাওয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মাও. ফরিদুল ইসলাম, অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক, জয়নাল আবেদীন, আব্দুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইনসহ অন্যান্য জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাসূলুল্লাহর (সা) ভালোবাসা এবং জীবনাদর্শ ব্যতীত কোনো মুসলিম দাবিদার পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। কেউ নিজেকে মুসলিম দাবি করে ইসলামের আচার অনুষ্ঠান পালন করতে চাইলে, অবশ্যই তার ইবাদত ও আমলে রাসূলুল্লাহর নির্দেশিকা থাকতে হবে। রাসূল (সা) যা যা তাঁর উম্মতের জন্য নির্দেশ এবং নিষেধ করে গেছেন, তা ব্যতিরেকে কেউ নতুন কিছু (সওয়াবের আশায়) পালন করলে তা কখনোই আল্লাহ মেনে নিবেন না। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর জীবনে যা যা তাঁর সাহাবীদের (রা) করতে বলেছেন এবং যা যা করতে নিষেধ করেছেন তা আমাদের মেনে চলতে হবে। আর রাসূলকে মেনে চলাটাই হচ্ছে সম্পূর্ণ ইসলাম। যারা রাসূলকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারবে তারাই হচ্ছে আল্লাহর পরীক্ষায় কৃতকার্য।
পরীক্ষার হল পরিদর্শনকালে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আজকে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব যে ক্রান্তিকাল, সংকট, দুর্যোগের মধ্যে নিমজ্জিত আছে এখান থেকে মুক্তির পথই হচ্ছে প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত বিধানকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা। মুহাম্মদ (সা) এর জীবন অনুসরণের মাধ্যমেই স্থিতিশীল বাংলাদেশ তৈরি করা যাবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। স্থিতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাসূল (সা)-এর জীবন আদর্শ অনুসরণই মুক্তির একমাত্র পথ। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা) জীবনী যত জানা যাবে ততো মানা সহজ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ অন্যান্য বছরের মতো এবছরও আয়োজন করেছে সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতা। আমরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করে জামায়াতের জনশক্তিদের পাশাপাশি সংগঠনের সুধী, শুভাকাঙ্খি, সহযোগী ও কর্মী সকলের জন্যই আমরা এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। আমাদের দেশে বর্তমান যে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে, যেখানে ইসলাম বা ইসলামপন্থী ব্যক্তি, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা)-সহ নবী-রাসূল আম্বিয়ায়ে-কেরাম ও সাহাবাগণ ছাড়াও বা ইসলামী ব্যক্তিত্বদের জীবনী জানা তো দূরের কথা বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে রীতিমতো একটা ভঙ্গুর জাতিতে পরিণত করা হচ্ছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে একটি আদর্শিক, নৈতিক, নিপিড়িত সংগঠন হিসেবে জ্ঞান বিশ্বাসে সমৃদ্ধ হয়ে একদল মানুষ তৈরি করা ছাড়া, একটা আদর্শ পরিবার ছাড়া সমৃদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরি হতে পারে না। আদর্শ সমাজ-রাষ্ট্র তৈরি করতে গেলে আদর্শ পরিবার লাগে, সেখানে আদর্শ ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। চলমান পরিস্থিতিতে শুধু যোগ্যতাই শেষ কথা নয়। সেখানে যোগ্যতার সাথে আমানতদারিতা, নৈতিকতা, দক্ষতা জড়িয়ে রয়েছে। সবক্ষেত্রে সুশাসনের কথা বলা হয়ে থাকে। আসলে সুশাসনের মূল কথাই হচ্ছে ‘ইসলামী শাসন।’ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থায় জনগণের প্রকৃত শান্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী হিসেবে মনে করি সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূল (সা)-কে জানা বা তার জীবনী পাঠ করা আজকে আমাদের জন্য অনিবার্য বা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের দায়বদ্ধতার যায়গা থেকে মনে করছি, জামায়াতের কর্মী-সহযোগীসহ সকল পর্যায়ের জনশক্তির মান-উন্নয়ন করা। নবী (সা) কে জানার প্রয়োজনে সবার মাঝে উৎসাহ তৈরির জন্য আমরা এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছি। পরীক্ষা শেষে ফলাফলের মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র গঠন করতে হলে এবং আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে গড়তে হলে রাসূল (সা) যে আদর্শের মাধ্যমে সোনার মদীনা রাষ্ট্র গড়ে ছিলেন, সেইভাবে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা)-কে অনুসরণের মাধ্যমেই সত্যিকার সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।