বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে এখন দুর্বিসহ অবস্থা বিরাজ করছে। মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিচারের নামে অবিচার মানুষের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। মানুষের মান সম্মান নিয়ে বেচে থাকার অধিকার নেই। এক কথায় জাতি এখন সর্বহারা জাতিতে পরিণত হয়েছে। এই অচলাবস্থা সৃষ্টি করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। সরকারকে তিনি বলেন, ক্ষমতা কারো চিরদিন থাকে না, আপনাদের যাওয়ার পালা এসেছে। বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়ে জাতির কোন ক্ষতি না করে বিদায় নিন। ২৮ অক্টোবর আমাদের ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন, কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি, তেমনি আমাদের এই প্রিয় সংগঠন কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না। তিনি সকালের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। অপশক্তির পরাজয়, ধ্বংস অনিবার্য।
শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর লগি-বৈঠার তান্ডবে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণকারীদের স্মরণে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপনের পিতা মু. তাজুল ইসলাম ও শহীদ সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুমের গর্বিত পিতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান। আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য হাফিজুর রহমান, শাহীন আহমদ খান, আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মহানগর শিল্পী গোষ্ঠী শহীদী গান পরিবেশন করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আমরা দেখেছি, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আমরা দেখেছি। মানুষের বাঁচার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারাই মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। তারা শেষ পেরেকটা মেরেছিলেন বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে। হিমালয়সম ব্যর্থতা ঢাকতে মানুষের কন্ঠরোধ করতে তারা দুইটা অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। একটা ছিল রাষ্ট্রীয় জল্লাদ বাহিনী গঠন, যার নাম ছিল রক্ষীবাহিনী। দ্বিতীয় হলো সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠরোধ করা। রক্ষীবাহিনী যা ইচ্ছা, তাই করতে পারতো। তাদের আইনের কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না, সংবিধান বা কোন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহীতার বিষয় ছিল না। তাদের হাতে ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন, ৩২ হাজার যুবক বিনা বিচারে সেদিন নিহত হয়েছিল। এটা লজ্জার, এটা কলংকের। কোন অপরাধীকেও বিনা বিচারে হত্যা করার এখতিয়ার কারো নেই। কোন সভ্য সমাজে তা হতে পারেনা। সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের আয়না আর সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির জাগ্রত বিবেক। সে সময় রাষ্ট্রীয় ৪টি সংবাদপত্র ছাড়া সবগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সরকারের ইচ্ছার বাইরে কোন কিছু লেখা বা প্রকাশ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না।
ডা. শফিক বলেন, ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় তারা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কিছু মানুষকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার জন্য এই কাজ করেনি, তারা এই কাজ করেছিল এই দুই সংগঠনে যারা নেতৃত্ব দেন, তাদেরকে নির্মমভাবে, পাশবিক কায়দায় দুনিয়া থেকে বিদায় করার মাধ্যমে গোটা জাতির অন্তরে ভয় ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলো। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে তারা বেছে নিয়েছিল, কারন তাদের কাছে স্পষ্ট ছিল এই সংগঠন বাংলাদেশের জনগনের স্বার্থ, দেশপ্রেম ও দ্বীনের ব্যাপারে কারো সাথে আপোষ করে না। আপোষ করতে জানে না। সুতরাং এই পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক, ঈমানদার শক্তিকে যদি আঘাত দিয়ে শেষ করে দেয়া হয়, তাহলে বাকী সব এমনিই ভেসে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় সেদিন তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়নি। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির শেষ হয়ে যায়নি। এখন এই সংগঠনগুলোকে ঘিরেই দেশের মজলুম মানুষ স্বপ্ন দেখে। বেঁচে থাকার স্বপ্ন, দু:সহ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার স্বপ্ন দেখে।