বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, নির্মল বায়ু সুস্থ স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সকলে মিলে ঢাকাকে সবুজের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে গাছ। প্রকৃতি মহান আল্লাহর বিশেষ দান। পরিবেশ ও প্রতিবেশের অন্যতম নিয়ামক হলো উদ্ভিদ ও গাছপালা। গাছগাছালি, বৃক্ষতরু ও লতাগুল্ম থেকেই আসে আমাদের জীবনধারণ ও জীবন রক্ষার সব উপকরণ। রাসূল (সা) নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন, সাহাবাগণকে গাছ লাগাতে ও বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ব্যক্তিগত ও সামাজিক বনায়নও করেছেন। রাসূল (সা.) বৃক্ষরোপনকে সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ, পাখি বা পশু যখন তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন তা তার (রোপনকারী) পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয়’ (মুসলিম, ২৯০০)। তাই আমাদের শ্লোগান “গাছে গাছে সবুজ দেশ, আমার সোনার বাংলাদেশ”। এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আমরা আমাদের বসত বাড়ির আঙিনায় বা বাসার ছাদে অথবা উম্মুক্ত স্থানে প্রত্যেকে ৩টি করে গাছ লাগাবো।
তিনি আজ ২৪ জুন ২০২২ শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বৃক্ষরোপন অভিযান ২০২২ এর উদ্বোধন উপলক্ষে চারাগাছ রোপন ও বিতরণকালে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শেখ শরিফ উদ্দিন আহমেদ, কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম থানা আমীর মুজিবুর রহমান, থানা সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পরিবেশের দূষণ ও বিপর্যয়সহ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর একটি। উষ্ণায়ন বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে ভুগছে দেশ। ফলে নানাবিধ ক্ষতির সঙ্গে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। বাংলাদেশকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হলেও এখন তিনটি ঋতু ছাড়া অন্যান্য ঋতু এখন আর দৃশ্যমান ও অনুভূত হয় না! আবার এখন জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে চিরচেনা গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ঋতুর বিশৃঙ্খল আচরণ প্রকৃতিকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ভালো উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে গাছ লাগানো। এমতাবস্থায় পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সবার পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণের কাজে অংশ নেয়া উচিৎ। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাধারণ মানুষের মাঝে গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই সাথে আমরা বিপুল সংখ্যক বৃক্ষরোপন ও বিতরণের মাধ্যমে ঢাকা নগরীকে সবুজের নগরীতে পরিণত করতে চাই। তিনি সর্বস্তরের জনগণের কাছে আহবান জানিয়ে বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আসুন আমরা প্রত্যেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে কমপক্ষে ৩টি করে গাছ রোপন করি। ঢাকা মহানগরীকে সবুজের নগরীতে পরিণত করার জন্য আমাদের এই বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। একইসাথে তিনি সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচীর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মহান আল্লাহ কল্যাণকর কাজ সমূহ করতে তাগাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা প্রাকৃতিক পরিবেশকে মানুষের সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক বাসোপযোগী করে অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। মূলত মহান আল্লাহ আমাদের অশেষ কল্যাণে ও উপকারের জন্য নানা প্রজাতির পশুপাখি ও জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ও প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদ ও গাছপালা সৃষ্টি করেছেন। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সবাইকে গাছ লাগাতে হবে। আমরা তিন ধরনের বৃক্ষ বেশি বেশি রোপনের কথা বলছি। এক. ফলজ বৃক্ষ, দুই. বনজ বৃক্ষ, তিন. ঔষধী বৃক্ষ। সারাদেশে জামায়াতের লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীদের এভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আপনারা প্রত্যেকে এভাবেই গাছ লাগাবেন। জামায়াত একটি দায়িত্বশীল সংগঠন, বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার একাজে অবশ্যই আমরা ভূমিকা পালন করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
মুহা. দেলাওয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা নগরী পৃথিবীর অন্যতম ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে রয়েছে নানা শিল্প কল-কারখানা যার কারণে বাতাসে কার্বনডাই অকসাইড নিসরণ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। অন্যদিকে পরিবেশ স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছপালা নেই। ফলে নানাবিধ রোগ সংক্রমিত হচ্ছে বাতাসে। প্রকৃতি মানুষ ছাড়া বাঁচতে পারে, মানুষ প্রকৃতি ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই ইসলাম এই প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণে জনসচেতনতা তৈরিতে কালজয়ী নির্দেশনা প্রদান করেছে। আমরা ঢাকা নগরীকে সবুজের নগরী হিসেবে দেখতে চাই। সেজন্য মানুষকে এই বর্ষা মৌসুমে বেশি বেশি বৃক্ষরোপনের আহ্বান জানাচ্ছি।