বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হযরত ইবরাহিমের দেখানো শিক্ষায় আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার সে ইতিহাস আমরা জানি। আগুনের উত্তাপ এতই বেশি ছিল যে তার কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। অথচ আল্লাহর নির্দেশে মুহুর্তের মধ্যে তা শীতল হয়ে যায়। কোরবানির নেপথ্যে রয়েছে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঈমানি পরীক্ষায় শতভাগ অর্জন, যা তাঁকে যথার্থই ‘খলিলুল্লাহ’ বা আল্লাহর বন্ধু রূপে প্রমাণের সাক্ষ্য বহন করে। হজরত ইবরাহিম (আ.) একদা স্বপ্নযোগে তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার আদেশপ্রাপ্ত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি স্বীয় বিষয়টি হজরত ইসমাইল (আ.)-কে জানালে তিনি সানন্দে পিতা ইবরাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে পাওয়া আদেশ পালনের জন্য উপদেশ দেন এবং নানাভাবে কোরবানির কাজ সম্পন্ন করার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন। আমরাও সেই একই লক্ষ্যে ঈমান, আকিদা ও দ্বীন ইসলাম বিজয়ের স্বপ্ন দেখি। সুতরাং ইসলাম ও মানবতার প্রয়োজনে জামায়াতের রুকনদের জীবনের সকল পর্যায়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
তিনি শুক্রবার দিনব্যাপি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত রুকন (সদস্য) শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় সহঃ সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত রুকন (সদস্য) শিক্ষাশিবিরে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ও মুহা. দেলোয়ার হোসেন সহ মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা শপথের কর্মী হিসেবে আল্লাহর গোলামী করার জন্য আত্ম-নিবেদিত। এজন্য কুরআনের বিধানের আলোকে নিজেকে তৈরী করে দেশ সমাজ ও জাতি গঠনে আমরা প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। যারা সবসময় আমাদের বিরোধীতা করছেন, আমরা তাদেরকে আমাদের বন্ধু, ভাই-বোনের ন্যায় মনে করি। তাদের হেদায়াতের জন্য আমরা মহান রবের নিকট দোয়া অব্যাহত রাখবো। নিজেদের পরিশুদ্ধ করার জন্য ইবাদাত বন্দেগীতে আরও মনোযোগী হয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার প্রচেষ্ঠা চালাবো। হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) উভয়েই যখন মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোরবানি সম্পন্ন করতে প্রস্তুত হন, তখনই শয়তান নানাভাবে তাদের কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। আমাদেরও সে ধরনের নানাবিধ শয়তানের কুমন্ত্রণা যেন বিপথগামী না করে দেয়। সংগঠনের প্রয়োজনে সকল তৎপরতায় আমরা যেন সঠিক কাজটি করতে পারি সেজন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, জামায়াতের একজন রুকন হিসেবে মূলত রাসূল সা. এর দেখানো ও সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পন্থায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এভাবেই আমরা আল্লাহর করুণা পেতে পারি আর আল্লাহ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেই কেবলমাত্র আমাদের প্রকৃত সফলতা নিশ্চিত হবে।
এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকে আল্লাহ ফরজ করেছেন। এজন্য আমাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। সব কিছু উপেক্ষা করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সমাজকল্যাণ মুলক কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের তৎপর থাকতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াত কর্মী মানেই সমাজ কর্মী। সামাজিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মানুষের বিপদে আপদে এগিয়ে আসতে হবে।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আধুনিক জাহেলিয়াতের কারণে আজকে তরুণ ও যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। সরকার মদের লাইসেন্স প্রদান করে যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংসের পায়তারা করছে। এমতাবস্থায় জামায়াতের রুকন হিসেবে এই অপতৎপরতা রুখে দিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সেই সাথে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের সামগ্রীক তৎপরতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতের রুকন হিসেবে সংগঠনের শপথের জনশক্তি হিসেবে আমাদেরকে সময় গুলোকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান সময়ের দাবী হিসেবে একজন রুকনকে অবশ্যই তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে এবং নিজের ম্যানেজমেন্ট কোয়ালিটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। পেশাগত ও ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে যে সব কর্মসূচী আসবে সেগুলোতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। যেন নিজেকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার পরিবর্তন সাধন করার যোগ্যতা অর্জন এবং পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে বিভ্রান্তির মোকাবেলায় ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করে ভূমিকা রাখার উদাত্ব আহবান জানান।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সর্বপ্রথম পরিবারের ভিতরে ইসলামী আন্দোলনের মেজাজ নিয়ে আসতে হবে। পরিবার যদি ভারসাম্যপূর্ণ হয় তাহলে সামগ্রীক আন্দোলন আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। পরিবারের সদস্যদের বিয়ে-শাদীর ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্বীনদারীর বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা যদি তা করতে পারি, তাহলে ব্যক্তি, পরিবার ও সংগঠন সুদূর প্রসারী সফলতা পাবে ইনশাআল্লাহ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, এখলাসের সাথে সংগঠনের কাজকে এগিয়ে নিতে হবে। আল্লাহর সাহায্য মুমিনের খুবই নিকটবর্তী। সুতরাং রুকনদের (সদস্য) সকল কর্মকান্ডে আল্লাহর সাহায্য প্রত্যাশা করতে হবে। মানুষের পাশে থেকে সদা দায়ীর ভূমিকা পালন করতে হবে।