[বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তা নিম্নে পেশ করা হলো :]
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন। আসসালাতু আসসালামু আ’লা সাইয়্যিদিল মুরসালিন ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। ওয়া আ’লাল্লাযি নাত্তাবায়ূহুম বি-ইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দীন। অতি সম্প্রতি দু’টি মামলা নিয়ে প্রচার মাধ্যমে ঝড় তোলা হয়েছে। একটি মামলা “গ্যাটকো মামলা” নামে পরিচিত আর একটি “বড় পুকুরিয়া মামলা” নামে পরিচিত। এই দুটো মামলায় আমাকে জড়ানোর মূল কারণ মন্ত্রিসভার ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এই মামলায় আমাকে জড়ানোর খবর প্রচারের সাথে সাথে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তর থেকে যারা আমাকে ভালবাসেন, আমাকে ভাল জানেন তারা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে প্রতিনিয়ত টেলিফোন করে খবর জানতে চাচ্ছেন।
আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- এই মামলার ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগতভাবে মোটেই উদ্বিগ্ন নই এবং দেশবাসীকে আশবস্ত করতে চাই, এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন সংগত কারণ নেই। এই মামলায় যে অনিয়ম বা দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা বা সংশ্লিষ্টতা কারো পইে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে মন্ত্রী হিসেবে যারা সদস্য তারা নীতিগত সিদ্ধান্ত দেন। মূল ভূমিকা সেখানে পালন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব। সেই সাথে কমিটির চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করেন কেবিনেট সেক্রেটারীসহ আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সচিব। রহস্যজনকভাবে এই মামলায় কয়েকজন সচিবকে আসামী করা হয়নি, অভিযুক্ত করা হয়নি। এ থেকেই প্রমাণিত হয় এটি একটি সাজানো মামলা এবং রাজনীতিবিদদেরকে হয়রানি করার একটি অশুভ ল্য নিয়ে এটা করা হয়েছে।
দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য করার নীল নক্শার এটি একটি অংশ বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশবাস করি। আদালতে এই মামলায় আমাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোন আইনগত সুযোগ নেই। আমি পূর্ণ আস্খার সাথে বলতে চাই- বিগত জোট সরকারের ৫ বছরে আমি দু’টি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। কৃষি মন্ত্রণালয়ে ২০ মাস আমি দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানে দুরবীণ দিয়ে তালাশ করেও এ পর্যন্ত কেউ কোন অনিয়ম কোন দুর্নীতি খুঁজে বের করতে পারেনি। পরবর্তী পর্যায়ে আমি ৪০ মাস শিল্প মন্ত্রণালয় চালিয়েছি। সেখানেও এ পর্যন্ত কারও পে দুরবীণ দিয়ে তালাশ করে কোন অনিয়ম, কোন দুর্নীতি আবিüকার করা সম্ভব হয়নি। কোন মন্ত্রী যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে তার দুর্নীতি করার প্রধানতম ত্রে হলো নিজস্ব মন্ত্রণালয়। সেখানে যদি আমি কোন অনিয়ম করে না থাকি, কোন দুর্নীতির আশন্সয় নিয়ে না থাকি, তাহলে একটি ক্রয় কমিটির সদস্য হওয়ার কারণে অন্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিষয়ের সাথে দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। এই মামলাটি যে রাজনীতিবিদদের হয়রানি করার জন্য একটি সাজানো মামলা এটার একটি প্রমাণ এখানে কয়েকজন সচিবকে জড়িত করা হয়নি।
দ্বিতীয়ত: আমাদেরকে পলাতক দেখানো হয়েছে। অথচ জরুরি অবস্খা জারীর পর থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত আমি প্রকাশ্যে ময়দানে আছি, নিজের বাসায় বসবাস করছি এবং দলীয় অফিসে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করছি। আমি বন্যার সময় ত্রাণ তৎপরতায় প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত সিডর আঘাতে জর্জরিত এলাকায় আমি ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছি, সাংবাদিক সমেôলন করেছি। রবিউল আউয়াল মাসে রাজধানী শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিরাতুন্নবী (সাক্স) সমেôলনে বক্তব্য রেখেছি। এরপরও যদি আমাদেরকে পলাতক দেখানো হয় তাহলে এটা একটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) নিজেরাই যদি কারো বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর জন্য মিথ্যার আশন্সয় নেয় তাহলে সেটা আর দুর্নীতি দমন কমিশন থাকে না। সেটা রাজনৈতিক নিপীড়নের একটি ইনস্টন্সুমেন্টে পরিণত হয়।
দেশবাসী এ বিষয়টির প্রতি নজর রাখবেন বলে আমি আশাবাদী। আমি ঐসব শুভাকাáী ভাই ও বন্ধুদের প্রতি বলতে চাই, এই মামলায় আমাকে জড়িত করার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মোটেই উদ্বিগ্ন নই, আমি নিজেকে নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই। কিন্তু এ ধরনের মামলার পেছনে যে মনমানসিকতা কাজ করছে তার ফলশ্রুতিতে দেশ কোথায় যাবে, দেশের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, এ নিয়ে অবশ্যই আমি চিন্তিত, অবশ্যই আমি উদ্বিগ্ন। ১/১১ এর পর থেকে ১৬ মাস যাবত দেশের ঘটনা প্রবাহ প্রমাণ করে, বাংলাদেশকে অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্টন্স প্রমাণ করে বাংলাদেশকে যারা তাঁবেদার করদরাজ্যে পরিণত করতে চায় তারাই ১/১১ এর পূর্ব পরিস্খিতি সৃষ্টি করেছে এবং ১/১১ এর পরে তাদের ল্য বাস্তবায়নের দিকে দন্সুত দেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে ব্যর্থ অকার্যকর রাষ্টন্স প্রমাণ করে ভিন্ন রাষ্টেন্সর তাঁবেদার বা করদরাজ্যে পরিণত করার আয়োজন চলছে। এ পথে বাধা দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং রাজনীতি। তাই দেশকে রাজনীতি শূন্য করার ল্েয রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য করার আয়োজন চলছে।
এদেশের জনমানুষের ইসলামী চেতনা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি। আমাদের বর্ডারের উৎস মুসলিম জাতিসত্তার সৎ স্বতন্ত্র চেতনা। এই চেতনাকে নস্যাত করার জন্য, ধ্বংস করার জন্য রীতিমত আয়োজন চলছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই দুর্নীতির সাথে আমার সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নই উঠে না। এরপরও আমাকে টার্গেট বানানো হয়েছে। কারণ আমি ইসলামী আদর্শের কথা বলি, ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলি, যে ইসলামী আদর্শ ভিত্তিক রাষ্টন্স ব্যবস্খা, সমাজ ব্যবস্খা মানুষকে শোষণমুক্ত, শান্তি-সুখের, ন্যায় এবং ইনসাফের একটি সমাজ উপহার দিতে সম। যে চেতনা দেশবাসীকে বাইরের সকল ডিকটেশন থেকে মুক্ত থাকার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করতে সম। এই আদর্শের ধারকবাহক হওয়াই আমার বড় অপরাধ। এই জন্যেই অন্যায়ভাবে আমাকে মামলার আসামী করে নিগৃহীত করা, হয়রানি করার একটা আয়োজন করা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশবাসী আল্লাহ তায়ালা আলিমুল গায়েব। তিনি জানেন কোন অনিয়ম কোন দুর্নীতির সাথে আমার বা আমার দলের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
অতএব আল্লাহর সাহায্যে ইনশা-আল্লাহ আমি নিজেকে এই মামলার কার্যক্রমের ব্যাপারে আইনগত পদপে নিয়ে নির্দোষ প্রমাণ করতে সম হবো। সেই সাথে আমি নিজে এখন মজলুম গোটা দেশবাসীই এখন মজলুম। ১/১১ এর পর থেকে ১৬ মাসে দেশের মানুষের সমস্যা আজকে কোথায় গিয়েছে দেশবাসী সকলেই এর সাী। দন্সব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্য সামগ্রীর অগ্নিমূল্য দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, তারা সকলেই এখন মজলুম। এই মজলুম মানুষের হৃদয়ের কান্না অন্তরের ফরিয়াদ আল্লাহর আরশ পর্যন্ত অবশ্যই পৌঁছবে। মজলুমের দোয়া জালেমের শক্তিশালী হাতিয়ারের চেয়েও অনেক অনেক শক্তিশালী। এই মজলুমের কাতারে এখন আমিও শামিল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশবাসী সেদিন খুব বেশী দূরে নয়, যে দিন আল্লাহর সাহায্যে জালেমের উপরে মজলুমের বিজয় নিশ্চিত হবে। নাছরুমমিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব ওয়াবাশশিরিল মু’মিনীন। আমি বর্তমান সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকেসহ দেশের সকল রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ বিবেকবান মানুষের কাছে একটি পরিষ্কার কথা বলতে চাই :
বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে গণতন্ত্রে বিশবাসী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরই ফসল। এই দেশের মানুষ অতীতে বার বার অগণতান্ত্রিক ব্যবস্খার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ১/১১এর প্রোপটে জরুরী অবস্খা জারীর মাধ্যমে আজকে জাতিকে যে জায়গায় আনা হয়েছে এটা কোন সংকট উত্তরণের বাস্তব সম্মত সমাধান নয়। কৃত্রিম উপায়ে কোন রাজনৈতিক সংস্খা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না, সুস্খ রাজনীতির ধারা সৃষ্টি করতে পারে না। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। একটি বিশেষ মহল নির্বাচনে পরাজয়ের আশংকায় নির্বাচন ঠেকানোর জন্যে যে অগণতান্ত্রিক পদপে নিয়েছিল সহিংস রাজনীতির জন্ম দিয়েছিল, তারই ফলশ্রুতিতে ১/১১তে জরুরী অবস্খা জারী করা হয়েছে। একটি যুক্তি দেখানো হয়েছিল- একটি বড় দল এবং তাদের জোট নির্বাচন বয়কট করলে নির্বাচন হবে একতরফা।
দ্বিতীয় কথা তাদের ছিল, নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত। আজকেও আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি নয় একাধিক বড় দলকে কৃত্রিমভাবে নির্বাচনের বাইরে রাখার আয়োজন চলছে, চক্রান্ত চলছে, অপপ্রয়াস চলছে। একই সাথে নির্বাচন কমিশনও তাদের নিজস্ব ভূমিকার মাধ্যমে নিজেদেরকে বিতর্কিত করে তুলছে। অতএব যে অজুহাতে ২২শে জানুয়ারী নির্বাচন হতে দেওয়া হয়নি সেটাকে যদি তারা জাস্টিফাইড মনে করেন তাহলে বর্তমানে যে পরিস্খিতি সৃষ্টি হয়েছে এই পরিস্খিতিতে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
১/১১-এর প্রোপটে যারা সরকারী দায়িত্বে এসেছেন সংবিধান অনুযায়ী তাদের একমাত্র ম্যান্ডেট সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। অবশ্যই সেই নির্বাচনকে কালো টাকার প্রভাব মুক্ত হতে হবে, পেশীশক্তির প্রভাব মুক্ত হতে হবে। এর বাইরে তাদের কোন করণীয় নেই। কৃত্রিমভাবে যদি এই মূল দায়িত্ব পালন না করে অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব তারা হাতে নেন তাহলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এর আয়োজন দন্সুত সময়ের মধ্যে করতে হবে। সরকারের ঘোষিত রোড ম্যাপের ব্যতিক্রম যাতে না ঘটে এ ব্যাপারে আমরা সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এবং সেই সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেরই দায়িত্বশীল এবং গঠনমূলক ভূমিকা কামনা করি।
দেশবাসীর উদ্দেশে আমি পরিষ্কার বলতে চাই, আমাদের দেশ বর্তমানে এক মহাসংকটের আবর্তে জড়িয়ে পড়েছে। এই সংকট উত্তরণের জন্যে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজকে হুমকির মুখোমুখি। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। দেশের মানুষের ইসলামী চেতনার উপরে আঘাত আসছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাইরের হস্তপে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্খা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অুণí রাখতে হলে, দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রা করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করতে হলে এবং দেশের মানুষের ঈমান, আক্বিদা, ইসলামী চেতনা সংরণ করতে হলে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ একটি প্রয়াস অপরিহার্য-সময়ের দাবি।
আমি আশা করব গণতন্ত্রের অতন্দন্সপ্রহরী বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনমানুষ এ সময়ে ধৈর্যের সাথে, শৃংখলার সাথে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ও আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে সংকট থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবেন। জামায়াতে ইসলামী একটি খালেস নির্ভেজাল ইসলামী আন্দোলন। ইসলামী আদর্শের পতাকাবাহী এই সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ধারায় আন্দোলনের একটি উজ্জ্বল ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে সম হয়েছে। আজকের বিশেষ প্রোপটে দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বে বিশবাসী, গণতন্ত্রে বিশবাসী, শান্তিকামী মানুষকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রেও জামায়াতে ইসলামীকে একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ:)। তারা অত্যন্ত দরদভরা মন নিয়ে তাদের সমসাময়িক জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর কাছে, জাতির কাছে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর আহ্বান জানিয়েছেন এবং তার ভিত্তিতে শান্তি-সুখের, ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বল প্রয়োগের পথে যাননি, সন্ত্রাসের পথে যাননি। তারপরেও তারা রাষ্টন্সীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূল (সা:) রাহমাতুল্লিল আ’লামীন। তার পরও মক্কার ১৩ বছরে তিনি নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিন্তু ধৈর্যহারা হননি। বর্তমান প্রোপটে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, পরিস্খিতি যাই হোক না কেন তাদেরকে শান্ত থাকতে হবে, সুশৃংখল থাকতে হবে, আইনের প্রতি শন্সদ্ধাশীল থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকা পালন করতে হবে।
অন্যায়ের কাছে মাথানত করা যাবে না, আবার শৃংখলা ভঙ্গের কোন পরিস্খিতির শিকার হওয়া যাবে না। যুগপৎভাবে দুটো জিনিসকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরা বর্তমান সময়ের দাবি অনুযায়ী যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। আমি দৃঢ়ভাবে এটা বিশবাসী জামায়াতে ইসলামী কোন ব্যক্তিকেন্দন্সীক দল নয়, এটা একটি ইনস্টিটিউশন। কোন ব্যক্তির অনুপস্খিতি এখানে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে আমি এটা মনে করি না। যারা সংগঠনের নেতৃত্বে থাকবেন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতি অনুগত থাকবেন, তাদের আনুগত্য করবেন। তাদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে-ময়দানে ভূমিকা পালন করবেন।
দেশবাসীকে সাথে নিয়ে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন, আমি দৃঢ়ভাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সকলের প্রতি, যারা আমাকে নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন সেই জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদেরকে আমি এই আশবাস দিয়ে যেতে চাই যে, আমরা কোন অন্যায় করিনি, আমরা কোন অপরাধের সাথে জড়িত নই। এটার সাক্ষী দেশবাসী ও সর্বোপরি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন। অতএব তিনি আমাদের প্রতি রহম করবেন, অন্যায়ের সাথে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে তিনি গাফেল নন, আমরা যারা জুলুমের শিকার এদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা গাফেল নন। আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে আমাদের কারো নিরাশ হওয়ার প্রশ্ন উঠে না। এই সময়টাই সর্বোৎকৃষ্ট সময়, আল্লাহর কুরআন থেকে, রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত থেকে দিক নির্দেশনা গ্রহণ করার প্রেরণা গ্রহণ করার। সবরের সাথে ইস্তেকামাতের সাথে, সাবেতে কদমের সাথে, ধৈর্যের সাথে সুদৃঢ়ভাবে ময়দানে টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ময়দানকে ইসলামের অনুকূলে রাখার একটি সুযোগ আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমি আশা করবো ইসলামী আন্দোলনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের এই দূরদর্শিতা আছে। তারা দূরদর্শিতার সাথে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে জনগণকে আস্খায় নিয়ে তারা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সম হবে। আমি এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য আপাতত শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ জিন্দাবাদ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।