গত ২৭ মার্চ রাতে তারাবীহ’র নামাজ আদায় করার সময় গুলশানের সুবাস্ত টাওয়ার সংলগ্ন একটি ইসলামী সেন্টার থেকে পুলিশ কর্তৃক ৩ জন হাফেজ, দুইজন নারী ও এজন শিশুসহ ১৭ জনকে সম্পূর্ণ বেআইনী ও অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে, অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটি।
আজ বাদ জুম’আ হাজার হাজার আলেম-উলামা ও সাধারণ জনতার অংশ গ্রহণে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররামের উত্তর গেইটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিজয়নগর পৌঁছলে পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং সেখান থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।
বায়তুল মুকাররম মসজিদের উত্তর চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পীর সাহেব মাওলানা আবু তাহের জিহাদি আল কাসেমের সভাপতিত্বে ও জনসেবা আন্দোলনের আমির মুফতি ফখরুল ইসলামের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, মুসলিম জনতা ঐক্য পরিষদের আমির মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, ইমাম-খতিব ঐক্য পরিষদের আমির মুফতি মাসুদুর রহমান,পীরে কামেল মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী, মুফতি আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি মিজানুর রহমান, মাওলানা ড. আবু নাসিফ, অধ্যক্ষ মোশারফ হোসাইন, মাওলানা নোমানী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয়, সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার হলেও তারাবীহ’র নামাজ আদায়ের সময় ১৭ জন ধর্মপ্রাণ মানুষ সহ নারী শিশুকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে সরকার গণমানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে। তারা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় তৌহিদী জনতা রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে।
তারা বলেন, পবিত্র মাহে রমজানে মুসলিম উম্মাহ ইবাদত বন্দেগি করে সময় অতিবাহিত করছে। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সাহরী, ইফতার, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইলের মতো ইবাদতে মশগুল থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি বা রাষ্ট্রযন্ত্রের কিছু অতি উৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মপালনকে বাধা দিয়ে সংবিধান অবমাননার মত গুরুতর অপরাধে লিপ্ত রয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২(ক)-এ বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মপালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা নিশ্চিত করিবেন’। তাহলে তারাবিহ’র নামাজরত অবস্থায় নারী শিশু সহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হলো কেন? যা জনমনে রীতিমত বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। কিন্তু গুলশানে মুসল্লিদের আটকের ঘটনা সংবিধানের সেই অধিকারকে মারাত্মকভাবে খর্ব করেছে। কারণ, বর্তমান সরকার শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হয়ে ইবাদত বন্দেগি পালনে বাধা দিয়েছে। মুসল্লীদের গ্রেফতার করা হয়েছে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে। আলেম ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের অন্যায়ভাবে গুম, গ্রেফতার, মামলা ও হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। আলেম-ওলামা ও ইসলামী অনুশাসন মেনে জীবন পরিচালনাকারী নাগরিকদের হয়রানি ও গ্রেফতার করে তারা ইসলাম বিদ্বেষের চরম নজির তুলে ধরেছে। ২৭ মার্চ গুলশানের যে ইসলামিক সেন্টারটি থেকে নারী শিশু ও ইমামসহ যাদের আটক করা হয়েছে, সেটি দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ স্থানীয় বাসিন্দারা পরিচালনা করে আসছেন।
তারা আরো বলেন, দেশের ইসলাম প্রিয় প্রত্যেক নাগরিক নিজেদের মা-বোন ও শিশুদের নিরাপত্তা, ইজ্জত আবরুর সর্বোচ্চ মর্যাদা ও গুরুত্ব দেয়। কোনো অবস্থাতেই সম্মানিতা নারীদের হয়রানি মেনে নেয়া হয় না। কিন্তু অত্যন্ত উপরিতাপের বিষয় ২৭ মার্চে রাতে নামাজরত নারী ও শিশুদের গ্রেফতার করে সরকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কলিজায় আঘাত হেনেছে। তাই সময় এসেছে প্রতিবাদের। তারা সরকারকে সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় সরকারকে তৌহিদী জনতার রোষাণলে পড়তে হবে।
আজকের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পীর সাহেব মাওলানা আবু তাহের জিহাদি আল কাসেম ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী। তারা আলেম ওলামাদের মিছিলে এই হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অগ্রহনযোগ্য উল্লেখ করে বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আলেম ওলামাদের কলিজায় আঘাত হেনেছে। যার মাধ্যমে তারা আবারও ইসলাম বিদ্বেষের নজির উপস্থাপন করলো।
বার্তা প্রেরক
মুফতি ফখরুল ইসলাম