বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ মাহে রমজানের বৈপ্লবিক দিক তুলে ধরে বলেন, যুগে যুগে মুসলমানরা শান্তিপূর্ণভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাস উদযাপন করেছেন। কিন্তু কোন অন্যায়কে মুসলমানরা কখনো প্রশ্রয় দেয়নি এবং অন্যায়ের সঙ্গেও কোন আপোসও করেননি।
এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ঈমান ও কুফরের মধ্যে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। যা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বা ২য় হিজরির ১৭ রমজান বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলার সাহায্যে মাত্র ৩১৩ জন নিরস্ত্র মুসলমানের মোকাবেলায় শোচনীয় পরাজয় বরণ করে কুরাইশদের সহস্রাধিক সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী। এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে মহাবিপ্লব সাধিত হয়। তাই পবিত্র কোরআনে এ যুদ্ধকে ‘ইয়াওমুল ফোরকান’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বদর যুদ্ধে আবু জাহেল, উতবা, শায়বাসহ মোট ৭০ জন কাফির নিহত হয়। অন্যদিকে ১৪ জন মুসলিম মুজাহিদ শাহাদাতের গৌরব অর্জন করেন। যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর ক্ষমাসুলভ আচরণে মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীতে অনেক বন্দী ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাই বদর দিবসের শিক্ষা নিয়ে সমাজ থেকে সকল প্রকার জুলুম ও অশান্তির মুলোৎপাটন করে আমাদের ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বংশাল থানার উদ্যোগে আয়োজিত বদর দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য ও বংশাল থানা আমির আজমল হোসাইনের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মোকাররম হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, কামাল হোসেন, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস শুকুর, মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ড. মাসুদ বলেন, মানুষের হেদায়াত এবং মুক্তির নির্দেশনা দিয়ে রমযান মাসেই আল্লাহপাক পবিত্র কুরআন নাযিল করেন। কুরআন নাজিলের কারণেই রমযান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো আল কুরআন। পবিত্র কুরআনের যথাযথ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে মানবজাতির উন্নতি, অগ্রগতি ও প্রকৃত কল্যাণ। অথচ পৃথিবীর মুসলমানেরা আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। পবিত্র কুরআনের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ায় তারা আজ এক অসহায় জাতিতে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিন, আরাকান, সিরিয়া সহ দিকে দিকে মুসলিম জনগন ও জনপদ গুলোতে সাম্রাজ্যবাদ ও ইসলাম বিরোধী শক্তি জুলুম-নিপীড়নের স্টিম রুলার চালাচ্ছে। বর্তমান সংঘাতময় পৃথিবীতে মানবতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় পবিত্র কুরআনই একমাত্র মুক্তি সনদ। ফলে কুরআনের দিকেই আমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
তিনি আরোও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ চরম হুমকীর মুখে। জনগনের ভোটাধিকারকে হরণ করা হয়েছে। মানুষের সাধারন মৃত্যুর কোন নিশ্চয়তা নাই। অপঘাত, বন্দুক যুদ্ধের নামে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে। দ্রব্যমুল্যের যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে প্রান্তিক, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। তিনি রমজান মাসকে ইসলামের প্রাথমিক এবং চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাস হিসেবে উল্লেখ করে এই মাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশবাসীকে সকল জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদীদের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় শপথ নেওয়ার আহবান জানান।