ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণে সম্প্রীতির এক মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। শুক্রবার (০২ মে) রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যাত্রাবাড়ী মধ্য থানা আয়োজিত ২দিন ব্যাপী লিডারশীপ ট্রেনিংয়ের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

অমুসলিমদের সংগঠনের দাওয়াত দেওয়া জামায়াতে ইসলামীর নিয়মিত কর্মসূচি উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসলামের দাওয়াত কেবল মুসলিমদের কাছে পৌঁছবে তা নয়। বরং দ্বীনের দাওয়াত সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। এটাই আল্লাহর বিধান। দ্বীনের দাওয়াত পেয়ে কে গ্রহণ করবে, কে গ্রহণ করবে না এটা ব্যক্তির, ব্যক্তিগত বিষয়। দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া ঈমানদারদের দায়িত্ব, আহ্বানে সাড়া দেওয়া ব্যক্তির দায়িত্ব। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য, এটাই ইসলামের শিক্ষা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোন সুযোগ নাই। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় মন্তব্য করে আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী সমাজের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে সভা, সমাবেশ, মতবিনিময় সহ নানামুখী কর্মসূচি পালন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে রাজধানীতে একটি প্রীতি সমাবেশ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠান করেছি। ঐ অনুষ্ঠানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ বিভিন্ন ধর্মের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় ব্যক্তিদের দাওয়াত করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী আধিপত্যবাদ-ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী আপোষহীন। জামায়াতে ইসলামী প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বের যেকোন রাষ্ট্রের সাথে সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে সম্পর্কে বিশ্বাসী। কারো দাদাগিরি কিংবা কর্তৃত্ব জামায়াতে ইসলামী মেনে নেয়নি, নিবে না। জনগণ ভালো করেই জানে, এদেশে আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকা পালনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জীবন দিতে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি জনগণের ভালোবাসা, আস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপপ্রচার চালিয়ে জামায়াতের অর্জন মুছে ফেলা যাবে না। জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণ, মানবিক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়বেই, গড়বে। ইনশাআল্লাহ।

এসময় তিনি আরো বলেন, ০৫ আগস্ট পরবর্তী এদেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। অতীতে ফ্যাসিস্ট সরকার ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, দখল দিয়ে, ধর্মীয় উপাসনালয় ভাংচুর করে জামায়াতে ইসলামী সহ ইসলামী দলগুলোর উপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার অপরাজনীতি সম্পর্কে জনগণ আজ সচেতন।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ৬ আগস্ট ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে সাহস যুগিয়েছেন। এর আগে তিনি দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকতে। দলের নেতাকর্মীরা সহ সারাদেশের আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রেখে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমীরে জামায়াত সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বারবার ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। আমীরে জামায়াত স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, প্রত্যেকে এদেশের সম্মানিত ও গর্বিত নাগরিক। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে জামায়াতে ইসলামীর ইতিবাচক ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরার সদস্য ও যাত্রাবাড়ী মধ্য থানা আমীর এডভোকেট আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী (ঢাকা-৫ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী) মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী (ঢাকা-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী) অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরার সদস্য ও যাত্রাবাড়ী মধ্য থানা সেক্রেটারী মাওলানা ইমাম হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মো. আব্দুর রব এবং মাওলানা আব্দুল মান্নান, যাত্রাবাড়ী পূর্ব থানা আমীর শাহজাহান খান প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মহানগরী ও থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।