যারা ভোগের রাজনীতি করে তারা শাসক হয়, যারা ত্যাগের রাজনীতি করে তারা সেবক হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ত্যাগের রাজনীতি করে সেজন্য জনগণের সেবকের ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শাসক হবে না, সেবক হয়ে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করবে। জনগণের প্রত্যাশিত বৈষম্য মুক্ত কল্যাণ, মানবিক, আদর্শ ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোদী সরকার ভারতীয় সংবিধান লঙ্ঘন করে খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে – ড. মাসুদ
ওমরের মত শাসকের জন্য ওমরের জনগোষ্ঠী প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সেই জনগোষ্ঠী তৈরির কাজ করছে। জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে চরিত্রবান, আদর্শ, সৎ ও আল্লাহ ভীরু নেতৃত্ব। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা জনগণের সম্পদ লুট করে না, করতে পারে না। জামায়াতের দুজন মন্ত্রী ৩টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে এবং বহু এমপি তাদের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমান তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত কেউ দুর্নীতির অভিযোগও দাঁড় করাতে পারেনি।
ড. মাসুদ বলেন, গণহত্যার দায়ে খুনি হাসিনাকে গোটা বিশ্বের কেউ আশ্রয় না দিলেও মোদী সরকার ভারতীয় সংবিধান ও আন্তর্জাতিক সকল আইন অমান্য করে খুনি হাসিনাকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। এই দায় নরেন্দ্র মোদী এড়াতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ধ্বংস করে এবার ভারতকেও ধ্বংস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ বাংলাদেশে ধর্ষনের সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরণ করেছে। সেই আওয়ামী লীগের ৪ নেতা ভারতে গিয়ে ধর্ষন করে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের উচিত ভারত থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী খুনি হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের পলাতক সন্ত্রাসীদের বের করতে তাদের সরকারকে বাধ্য করা।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় লুটেরা, সন্ত্রাসীরা ব্যতিত দেশের একজন মানুষও গত ১৫ বছর নাগরিক মর্যাদা ও অধিকার পায়নি। প্রতিটি নাগরিককে তারা আসামীর মত করে রেখেছিলো। জামায়াতে ইসলামী জনগণের নাগরিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রেখেছিলো। তারা ভেবেছে জামায়াতের নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দী রাখলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাওয়াত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কারাগারের বাহিরের চেয়ে কারাগারের ভিতরে আমরা বেশি দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতে পেরেছি। সেজন্যই আজ জামায়াতে ইসলামীর পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যতিত এদেশে হিন্দুুদের সম্পদ কেউ লুট করেনি। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু তার ‘আমার ফাঁসি চাই’ নামক বইতে উল্লেখ করেছেন, শেখ হাসিনার নিদের্শে ও অর্থায়নে তিনি হিন্দুদের মন্দিরে আগুন দিয়েছে! হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করেছে! হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে সার্ক সম্মেলন বন্ধ করতে চেয়েছে। সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারিয়ে এখন ইসকন ইস্যুতে হিন্দু সম্প্রদায়কে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে চেয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব এদেশের মুসলিমরা, হিন্দুুদের মন্দির পাহারা দিয়েছে। যে কোন দুর্যোগ-র্দুদিনে জামায়াতে ইসলামী হিন্দুদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে উল্লেখ করে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিবেন না। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট আছে এবং থাকবে। আওয়ামী লীগের মত, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে কাউকে সংখ্যালঘু বানিয়ে রাখবে না। জামায়াতে ইসলামী দেশের প্রতিটি নাগরিককে, নাগরিক হিসেবে মূল্যায়ন করে এবং করবে। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার সকলেই সমানভাবে ভোগ করবে। তাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিতে আহ্বান জানান।
কাশিমপুর থানা আমীর মাওলানা ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে কাশিমপুর মাঠে অনুষ্ঠিত কর্মী সমাবেশে প্রধান প্রধান বক্তা ছিলেন গাজীপুর মহানগর আমীর অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর নায়েবে আমীর মো. খায়রুল হাসান, মো. হোসেন আলী, মহানগর সেক্রেটারি আবু সাঈদ মো. ফারুক, সহকারী সেক্রেটারি মো. আজহারুল ইসলাম, মহানগর কর্ম পরিষদ সদস্য আবু সিনা মামুন, কোনাবাড়ি থানা আমীর ডা. কবির হোসেন প্রমুখ।