বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, গণআন্দোলনের মাধ্যমে জামায়াত তার নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছে আবার ফিরে যাবে। জামায়াতে ইসলামী তার গঠনতন্ত্রে বলেছে, সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে আল্লাহ। যারা এ কথা মানে না তাদের নিবন্ধন আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা নিবন্ধন চাইনা, ঈমান নিয়ে বাঁচতে চাই। এই ঈমান দিয়েই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হেফাজত করা হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলায় ন্যায়ভ্রষ্ট রায়ের প্রতিবাদে আজ ২১ নভেম্বর দেশব্যাপী র্কেদ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে নেতৃত্বদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে অর্থবহ করে ইসলামের ভিত্তিতে ন্যায় ও ইনসাফের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক বৃহৎ ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠন। বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে অধিকাংশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অধিকাংশ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সারাদেশে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল সংখ্যক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে দেশ ও জাতির খেদমত করেছে। এতদিন পর্যন্ত নিজেদের দলীয় ব্যানার এবং প্রতীকে নির্বাচন করতে পারলেও এই সরকার কেন হটাৎ করে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলো? আমরা মনেকরি সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত এই কাজটি করেছে। তফসিল ঘোষণার পরে অত্যন্ত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই সংগঠনটির নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটির যে ন্যায়ভ্রষ্ট রায় দিয়েছে বাংলাদেশের জনগণ তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশের জনগণ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে জীবন দিয়ে এই নিবন্ধন ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। তিনি জনতাকে উদ্দেশ করে বলন, প্রিয় ঢাকা বাসী জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের কারন কী আপনারা জানেন?নিবন্ধন বাতিলের মূল কারণ হলো জামায়াতে ইসলামী তার গঠনতন্ত্রে বলেছে সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। এ কথা যারা মানেনা তাদের নিবন্ধন আমাদের দরকার নেই।
তিনি আরো বলেন, এই অবৈধ সরকার তথাকথিত ইন্তেকাল কমিশনের মাধ্যমে জনধিকৃত ও প্রহসনের তফসিল ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের জনগণ এই অবৈধ তফসিল মানে না। এই অবৈধ তফসিলের নির্বাচন জীবন দিয়ে হলেও দেশের জনগণ রুখে দেবে। এই নির্বাচন কমিশন যেদিন গঠন করা হয়েছিল সেদিনই ইন্তেকাল করেছিল।আর অবৈধ তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে সেদিন তাদের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এই জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হওয়া তথাকথিত ইন্তেকাল কমিশন দিয়ে বাংলাদেশের কোন ভোট হতে পারেনা। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিতে হবে, জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নিবন্ধন বাতিল করে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার বন্ধ করা যাবেনা। সভা-সমাবেশ ও মিছিল করার অধিকার বন্ধ করা যাবেনা। বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে এই অধিকার দিয়েছে। আমরা সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনকে আরো বেগবান করে সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এসময় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মো. শামসুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুল্লাহ আলামীন, শাহিন আহমেদ খান, আবু নাবিল, আবু আম্মার, ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পূর্ব সভাপতি আকিক হাসান ও ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি তৌফিক হাসান, ছাত্রনেতা তাজুল ইসলাম ফয়সাল, হাসিবুর রহমান, নাঈম ইসলাম সহ বিভিন্ন থানা জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারি নেতৃবৃন্দ।
এদিকে রাজধানীতে একই দাবিতে আরো একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন সেখানে নেতৃত্ব প্রদান করেন। বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামাল হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান ও ড. মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মো. হাফিজুর রহমান, কামরুল আহসান হাসান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরার সদস্য আব্দুর রহীম জীবন, ইঞ্জি. মুহাম্মদ আলী, মীর বাহার, মুহাম্মদ শাহজাহান, আবু জয়নব, মির্জা হেলাল, সাদেক বিল্লাহ, মোজাফফর হোসাইন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন, ইঞ্জি. তমিজ উদ্দিন, মাও মিজানুর রহমান, ছাত্রশিবিরের রাকিব উদ্দিন, আবু সুফিয়ান সহ বিভিন্ন থানার আমীর ও সেক্রেটারি নেতৃবৃন্দ।
অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে দেশে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার দাবি গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এই দাবিতে দেশে যখন ব্যাপক আন্দোলন চলছে। চলমান আন্দোলনে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী যখন দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে যৌক্তিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তখন চলমান এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার তড়িঘড়ি করে জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এই ন্যায়ভ্রষ্ট রায় দিয়েছে। দেশবাসীর এই ন্যায়ভ্রষ্ট রায়কে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।