আল্লামা সাঈদী সরকারের অবিচারের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, তার শূন্যতা কোন দিন পূরন হবে না। তিনি দুই দুইবারের এমপি ছিলেন। কিন্তু কারাভ্যান্তরে সেই ধরনের চিকিৎসা পেতেন না। তার হার্ট এ্যটাক হয়েছিল, ইতিপূর্বে বারডেম হাসপাতালে ৫টি রিং পড়ানো হয়েছিল। নিয়মানুযায়ী আবারো হার্ট এ্যাটাকের পর তাকে সেই বারডেম হাসপাতালেই নেয়ার কথা ছিল। তাকে সেটা না করে সময়ক্ষেপন করা হয়। তার পরিবারের সদস্যদের ধারে কাছেও যেতে দেয়া হয়নি। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের দেখা করারই সুযোগ দেয়া হয়নি। কতটা অমানবিক কাজ তারা করেছে। জটিল রোগী হলে হাসপাতালে সাধারণত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু তার ব্যাপারে সেটা করা হয়নি। দ্রুত পরীক্ষা নিরীক্ষা করার ক্ষেত্রেও অবহেলা করা হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে কোন রোগীর ক্ষেত্রে এ রকম করা না হয় ।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসিসরে কুরআন, কারা নির্যাতিত মজলুম জননেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রূহের মাগফেরাত কামনায় এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাহফিলে অনলাইনে দেশে-বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সুধী, শুভানুধ্যায়ীরা অংশগ্রহন করেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা যাইনুল আবেদীন, সাইয়্যেদ কামালুদ্দিন জাফরী। বক্তব্য রাখেন ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, আল্লামা সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী ও মাসুদ সাঈদী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, মাওলানা আবু ফাহিম, আবদুস সালাম, ড. মোবাররক হোসাইন, সৈয়দ ইবনে হোসাইন প্রমুখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আল্লামা সাঈদী আজীবন শাহাদাতের তামান্না লালন করতেন। তবে তিনি চেয়েছিলেন, কুরআনের তাফসিরের ময়দানে ফিরে আসতে এবং তাফসির করতে করতে মৃত্যবরণ করতে। তিনি বলেন, তিনি কুরআনের জন্য পাগল ছিলেন। কুরআনী ব্যবস্থা চালুর জন্য পেরেসানীতে থাকতেন। যারাই তার কাছে যেতো, সবাইকে কুরআন পড়তে বলতেন, নামাজ পড়তে বলতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাকে নজিরবিহীনভাবে অমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। মৃত্যুর পর লাশের মালিক তো তার পরিবারের সদস্যরা, পুলিশ তো না। তার লাশটি স্ত্রীকে পর্যন্ত দেখতে দেয়া হয়নি। পুলিশ লাশ পিরোজপুর নিয়ে দ্রুত দাফনের জন্য চাপ দিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। মাওলানা আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি যেই কুরআনের জন্য আমৃত্য কাজ করে গেছেন, আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, যতদিন পর্যন্ত কুরআনের রাজ কায়েম না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আল্লামা সাঈদী অবিচার ও জুলুমের শিকার। মিথ্যা অভিযোগে তিনি ১৩ বছর কারাগারে বন্ধি ছিলেন। তাকে বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই অবিচারের বিচার আমরা আল্লাহর কাছে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ তায়ালা হয়তো দুনিয়াতে বিচার করবেন, না হলে আখেরাতে জালেমের বিচার অবশ্যই হবে। তিনি বলেন, মরহুম সাঈদী কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। কেয়ামত পর্যন্ত তা জারি থাকবে। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, কুরআনের সমাজ বিনির্মানে আমৃত্যু কাজ করে যাবো।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আল্লামা সাঈদী গোটা জীবনটা কুরআনের পথে কাটিয়েছেন। ৮৪ বছরের মধ্যে ১৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন আর ৫০ বছরের বেশি সময় কুরআনের ময়দানে ছুটে বেড়িয়েছেন। তিনি অবিচারের শিকার হয়েছেন। তার সাজাও বিস্ময়কর। একটি মামলায় ৪ জন বিচারপতির মধ্যে ৩ জন ভিন্ন ভিন্ন রায় দিয়েছেন। একজন বিচারপতি তাকে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তার যুক্তি রায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। একজন বিচারপতি মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছেন। আর বাকী ২ জন বিচারপ্রতি যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। সেখানে যাবজ্জীবনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমৃত্য কারাদন্ড । তিনি বলেন, রায় অনুযায়ী কারাদন্ডতো মৃত্যু পর্যন্ত ছিল। মৃত্যুর পরে তো কোন সাজা ছিল না। তাহলে তার লাশের সাথে এমন আচরণ করা হলো কেন? কেন লাশ পরিবারের কাছে দেয়া হলো না? কেন পরিবারের সদস্যদের দেখতে দেয়া হলো না? এর চেয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধ আর কী হতে পারে?
মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের পরীক্ষা নিয়েছেন। সবাইকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। যারা এই পরীক্ষায় টিকে যাবেন, তারাই ঈমানদার। মাওলানা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা কুরআনের আন্দোলনে অবিচল থাকবো, যতই বাধা আসুক না কেন ।
সাইয়্যেদ কামালুদ্দিন জাফরী বলেন, তার শূন্যতা আমি অনুভব করছি। তিনি পড়াশুনা করতেন। হিকমতের সাথে দাওয়াতী কাজ করতেন। কে কী বললো, তার পরোয়া করতেন না। সত্যের পথে, ঈমানের পথে তিনি অবিচল থেকেছেন।
ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, কোন লোভ লালসা তাকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। গ্রেফতারের পরও তার কাছে প্রলোভন এসেছিল, কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন। তিনি যা বলতে বাস্তবে তা আমল করতেন।
আবদুস সবুর ফকির বলেন, তিনি শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা লালন করতেন। আল্লাহ তায়ালা তার সেই আশা পূরন করেছেন। তিনি তাফসিরের ময়দানে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। দুই দুই বারের এমপি হিসেবে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাইতো তার জানাযায় কাদামাখা অবস্থায় সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহন করেছিলেন।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। সেখান থেকেও তিনি দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি মানুষকে নামাজের কথা বলতেন, কুরআনের কথা বলতেন। তার রেখে যাওয়া কাজ আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শামীম সাঈদী বলেন, আব্বার জীবনের শেষ মুহুর্তগুলোতে পরিবারের কোন সদস্য তার পাশে থাকতে দেয়া হয়নি। এই অবিচারের বিচার আমরা আল্লাহর কাছে দিলাম। তিনিই সর্বোত্তম বিচারক। মাসুদ সাঈদী বলেন, হাসোজ্জলভাবে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। অন্য সময় হাসপাতালে আসলে আমরা পাশে থাকার সুযোগ পাই। কিন্তু এবার সেই সুযোগটাও দেয়া হয়নি। তিনি কেমন আছেন, বুকের ব্যথা কতটা, এটা পর্যন্ত জিজ্ঞাস করার সুযোগ পাইনি। তিনি আজীবন কুরআনের কথা বলে গেছেন । আমরাও যেন কুরআনের পথে অবিচল থাকতে পারি।