বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি আদর্শবাদী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেশের এই সংকটকালীণ মূহুর্তে জীবনবাজী রেখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের জনগণ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের শোষণ ও নিপীড়নের মাঝে বসবাস করে যাচ্ছে। এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে বাচার জন্য জনগণ রাজনৈতিক দল গুলোর দিকে চেয়ে আছে। জামায়াতে ইসলামী এদেশের গণমানুষের অন্যতম একটি রাজনৈতিক সংগঠন। দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল হিসেবে জনগণ জামায়াতের কাছে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করে। জামায়াত জনগণকে সাথে নিয়ে পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে যাচ্ছে। সারাদেশে সকল জনশক্তি ও দেশবাসী জামায়াতের এই সব কর্মসূচিতে দলে দলে অংশগ্রহণ করছে। সকল বিরোধী দলগুলো যদি সম্মিলিতভাবে ময়দানে নামতে পারি তবেই দেশের জনগণের মুক্তি নিশ্চিত করা সহজ হয়ে যাবে। এই সরকারের সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। আজকে দেশের জনগণের মধ্যে আগ্রহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। রাজধানীতে আগামী ১লা আগস্ট জামায়াতের সমাবেশ নিয়ে জনগণ আশা দেখতে শুরু করেছে। আমরা এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ ও সারাবিশ্বের মানুষের কাছে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতি পুনঃব্যক্ত করতে চাই। এই সমাবেশ সফল হলে এদেশে ইসলামী আন্দোলন একটি মাইল ফলকে অতিক্রম করবে। সেই সমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের রাজধানীর সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। রাজপথের দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা সহ সকল দাবী আদায় করে নিতে হবে।
তিনি শনিবার রাতে রাজধানীতে আগামী ১লা আগস্টের সমাবেশ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ইউনিট দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, মাওলানা আবু সাদিক, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, ড. মোবারক হোসাইন সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ, থানা আমীর ও সেক্রেটারী ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশপ্রেমিক জনগণ সোনালী দিনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার বিরোধী দল ও মতের মানুষের উপরে জুলুম নির্যাতন করার পাশাপাশি মিথ্যা দোষারোপ চাপিয়ে জনগণকে অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধানতম ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জনগণ জামায়াতকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। এঅবস্থায় আমরা নির্লিপ্ত বসে থাকতে পারি না। জামায়াতের অতীত ইতিহাসের আলোকে দেশ ও জাতিকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন সেখানে জনগণের নেতৃত্ব পরিবর্তন হবে। জনগণ অধিকার আদায়ের জন্য ইতোমধ্যেই রাজপথে নেমে এসেছে। সেই আলোকে গত ডিসেম্বর থেকেই আমরা জনগণের প্রয়োজনে দশ দফা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছি। জামায়াত তার নিজস্ব অবস্থানে থেকে দেশের প্রয়োজনে জনগণের মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসলামী আদর্শকে সামনে রেখে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি। এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার আন্দোলনে ভয় পেয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রেখেছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও নায়েবে আমীর সহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করে রেখেছে। জামায়াতের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর উপরেই নয় সকল বিরোধী দল মত আদর্শের বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকার জুলুমতন্ত্র পরিচালনা করছে। আমরা বার বার নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের দাবী জানিয়ে আসছি। যা এদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। অথচ ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে অব্যাহতভাবে বিরোধী দল ও মতকে দমন করছে। অন্যদিকে জনগণের
মুক্তির আন্দোলন তীব্র আঁকার ধারণ করেছে। জামায়াত সেই আন্দোলনের সম্মুখে অবস্থান করে বাংলাদেশের এই অগণতান্ত্রিক অবৈধ আওয়ামী সরকারের পতন নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত গত ১০ জুন স্বল্প সময়ের মধ্যেই সমাবেশে যে বিশাল জনগণকে উপস্থিত করতে সক্ষম হয়েছিল তা সকল মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ১লা আগস্ট রাজধানীতে জামায়াতের যে সমাবেশ সেখানে জনগণের স্রোত তৈরি করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানুষের কাছে আস্থার এক মূর্ত প্রতিক হিসেবে প্রতীয়মান। দীর্ঘদিনের জুলুম নির্যাতনের পরেও ক্ষমতাসীনদের কাছে জামায়াত কঠিন ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে জামায়াত এদেশের জনগণের কাছে আশার বাতি জ্বালিয়েছে। তাই আগামী ১লা আগস্টের সমাবেশকে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য রাজধানীর প্রত্যেক মানুষের কাছে সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সকল নেতাকর্মী, বিশেষ করে ইউনিট দায়িত্বশীলদের অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই ক্রান্তিকালে দেশের ও জাতির প্রয়োজনে সকল আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে সম্মুখে থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। এদেশের জনগণ ভালোবেসে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে আসতে চাই। বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই শান্তিপূর্ন সভা সমাবেশ করে এসেছে। আমরা বিশৃংখলা চাই না, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। দেশের জনগণ মনে করে জামায়াতের সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী সহ রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা গুলোর নৈতিক দায়িত্ব। তাই আমরা রাজধানীতে শান্তিপুর্ণ সমাবেশ করতে চাই। সরকার আমাদের সমাবেশ সফল করতে সহযোগিতা করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। আজ দেশের জনগণের মুক্তির জন্য বড় বেশি প্রয়োজন এই অবৈধভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করা। তিনি আগামী ১লা আগস্ট মঙ্গলবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াতের শান্তিপুর্ণ সমাবেশ সফল করতে সর্বস্তরের জনগণকে দলে দলে অংশগ্রহণ করতে এবং বিশেষ করে রাজধানীর সকল শ্রেণীপেশার মানুষের প্রতি উপস্থিত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।