বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যাকাত শীর্ষক আজকের এই সুধী সমাবেশ টি মুসলিম প্রধান দেশের জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহর ঘোষণা, তাদের ধন সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করো, তা দিয়ে তাদের পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধ করো। সুধীদের নিসাব, ভালোবাসা, দোয়ার সাথে আর্থিক সহযোগিতা আমরা পেয়ে থাকি। তাদের এই সহযোগিতার ফলেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমাজের দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পায়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পথে যে অর্থ ব্যয় করা হয় ঐ সম্পদটুকুই ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদ, বাকি সবকিছু অন্যের জন্য। যারা সত্যিকার বুদ্ধিমান তারাতো কেবল নিজের নির্দিষ্ট মালকেই গ্রহণ করবে, আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করাকে ভালোবাসবে। আল্লাহর পথে ব্যক্তি যে সম্পদ ব্যয় করবে সেটাই পরকালে তার সুখের কারণ হবে। আল্লাহর পথে সম্পদ খরচ করা প্রকৃত অর্থে নিজের সম্পদ জমা রাখার মতো। মানবিক সহায়তার কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের যাকাত ও সার্বিক সহযোগিতার ফলেই আপনাদের প্রত্যাশিত কাফেলার সমাজকল্যাণমূলক সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে। মানবতার সেবা ও সমাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে কুরআনের রাজ কায়েম করতে চাই। কুরআনের আইনে মানুষ সম্মান ও ইজ্জত ভোগ করবে। আমরা সেই দিনটার জন্যই সংগ্রাম করছি।
শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ড. খলিলুর রহমান মাদানী। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারী মু. দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও সভায় মহানগরী দক্ষিণের সমাজসেবা ও সমাজ কল্যাণকমূলক কার্যক্রমের ২০২২ সনের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যাকাত দাতা ও সুধীদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাদের সম্পদে বারাকাহ দান করেন। এই সহযোগিতা পেয়ে জামায়াতে ইসলামী সমাজের দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পায়। যাকাতের নির্দিষ্ট ৮টি খাত বিবেচনায় রেখে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, লাশ দাফন, রোগীর সেবা, কর্যে হাসানা, পুনর্বাসন, তৃণমূল পর্যায়ে গরীব-দুঃখী মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সহ আরো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তারা হাতে নিয়েছে। এই কর্মসংস্থানের উদ্যোগকে সফল ও টেকসই করার জন্য কৌশলগত ও কারিগরি সহায়তাও প্রদান করছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা অনুযায়ী এক সময় মানুষের কোনো অস্তিত্ব ছিলো না, পরবর্তীতে তিনি মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন এবং আবার মৃত্যু দিয়ে এখান থেকে নিয়ে যাবেন। এই মধ্যখানের যে সময়টুকু নানা কর্মের সুযোগ মানুষকে দেওয়া হল, এই পরীক্ষায় তার ভালো মন্দের পূর্ণ হিসাব নিয়েই মহান রাব্বুল আলামীন আখেরাতে ফল স্বরূপ জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত করবেন। এই পৃথিবীতে আমরা সকলেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই এসেছি। আর পরীক্ষার সবচেয়ে বড় উপাদান হচ্ছে আমাদের জান ও মালের ব্যবস্থাপনা। পুরো দুনিয়াতে দুইভাবে পরীক্ষা করা হয়। এক. আমার মাল সম্পদ যা কিছু জোগাড় করেছি তার উপরে পরীক্ষা, দুই. জান বা যে জীবন নিয়ে আমি বেঁচে আছি তার চলার পথ আল্লাহমুখী হচ্ছে কিনা সে পরীক্ষা। আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘যারা তাদের মাল সম্পদকে কুক্ষিগত করে রাখে, তা আল্লাহর পথে খরচ করে না বরং শুধু নিজেদের কাছে জমা করে রাখতে বেশি ভালোবাসে। তাদের শাস্তি হচ্ছে, গরম আগুনের ছ্যাঁকা তাদের শরীরে দেওয়া হবে।’ আল্লাহ জানেন, মানুষের অভ্যাস হল সোনা দানা টাকা পয়সা জমিয়ে রাখতে পছন্দ করা। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, এ সম্পদ তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো। যাকাত ফরজ বিধান হিসাবে সম্পদের হিসেব কষে তা আমাদের অবশ্যই আদায় করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সম্পদশালীদের সম্পদে হক রয়েছে যারা প্রার্থী তাদের। যারা বঞ্চিত তাদের হক রয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন যারা মানুষের প্রতি দয়া করে না আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন না। আল্লাহ তার প্রতি সহযোগিতা করেন যিনি মানবতার কল্যাণে হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি চলতি বছরে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সমাজকল্যাণ মূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এই বছরে ব্যাপকভাবে মানুষের প্রয়োজনে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। সেই ব্যাপকভিত্তিক সমাজ কল্যাণমূলক কাজে আপনার যাকাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে অবদান রাখবেন সেই প্রত্যাশা করছি। মহানগরীর সমাজ কল্যাণমূলক কাজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনাদের হাত আরও সম্প্রসারিত করবেন। আমরা যেসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছি তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই। আপনারা আস্থা রাখতে পারেন, আপনাদের দেওয়া সহযোগিতা যথাযথভাবে আয়-ব্যয় এবং তা সঠিক ভাবে প্রদান করতে আমরা সচেষ্ট থাকবো ইনশাআল্লাহ। যারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাদের পাশে আমাদের ভাইয়েরা আন্তরিকতার সাথে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি সমাজের কল্যাণমূলক কাজে বিত্তবান সকলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান।
মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘হে মুমিনগণ আমি তোমাদেরকে যা দান করেছি তা থেকে দান করো, সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোনো বন্ধু সুপারিশকারী থাকবে না। তোমরা খরচ করো তোমাদের মৃত্যু আসার আগেই’। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মানবতার সেবায় বহুবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, এসব কাজ পরিচালনায় সম্মানিত দাতা সুধীদের সার্বিক সহযোগিতা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বিগত ২০২২ সালের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সমাজকল্যাণমূলক কাজের বিবরণী পেশ করে বলেন, আমরা নিছক একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নয় বরং মানবতার কল্যাণের জন্য, আমাদের আখেরাতের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য, সুখি-সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ করার প্রয়োজনে আমরা মানুষের পাশে থেকে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার, মানবতাকে উজ্জীবিত করার জন্য আমরা নানাবিধ সমাজ কল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করে আসছি। সে কাজে সম্মানিত সুধী ভাই-বোনদের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকার আহ্বান রাখছি।