বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মু. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বেদনাবিধুর ও কলঙ্কময় দিন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে যে নির্মম নৃসংশ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল তা ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং সভ্য সমাজে যা কল্পনা করাও যায় না। এ দু’দিনে ৫৭ জন চৌকস মেধাবী ও দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের পরিবার-পরিজনের উপর চালানো হয়েছিল নির্মম ও পাশবিক নির্যাতন যা সভ্যতার ইতিহাসে কালিমা লেপন করেছে। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই এই ঘটনা সংঘঠিত হয়। এই ঘটনায় দেশ ও জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। ইতিহাসের এই কলঙ্কজনক অধ্যায় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে দীর্ঘমেয়াদে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীকে দূর্বল করে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে। অপরদিকে এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে এদেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ধ্বংস করে দিয়ে আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সীমানাকে অরক্ষিত করে দেওয়ার নীল নকশা আঁকা হয়েছে।
আজ রবিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের মর্মান্তিক ও নৃশংস ঘটনার বিচারের দাবি ও নিহত শহীদদের স্মরণে আয়োজিত ‘আলোচনা সভায়’ সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম ও ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরা সদস্য শাহীন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জাতির ক্রান্তিকালীন সময়ে দেশপ্রেমিক শক্তি ও সেনাবাহিনীকে দূর্বল করতেই নীল নকশার অংশ হিসেবে পিলখানা ট্রাজেডি ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনার পূর্বাপর কিছু ঘটনা জনগণের সামনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফলে সেদিনের ঘটনা ও পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম দেখে দেশবাসী বুঝতে সক্ষম হয়েছে এই ঘটনার নেপথ্য শক্তি কারা। সেদিনের এই ট্রাজেডির মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। বিডিআরের অতীত গৌরবকে ভূলুন্ঠিত করে নতজানু এক বাহিনী গঠন করা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে হত্যা ও বিরাজনীতিকরণ করে মূলত দেশকে করদ রাজ্যে পরিণত করার প্রেক্ষাপট তৈরীর জন্যই পিলখানার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতিসত্তাবিরোধী অপতৎপরতা শুরু করেছে। তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের জনগণ ও সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকার এদেশের দেশপ্রেমিক শক্তিকে ধ্বংস করতে চায়। ইসলাম ও ইসলামপ্রিয় জনতা হচ্ছে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবজ। বর্তমান সরকার ইসলামী চেতনাকে মুছে ফেলার পাশাপাশি ইসলামী সংগঠন ও নেতৃত্বকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। এজন্য আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমীর শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারী মাও: রাফিকুল ইসলামসহ দেশপ্রেমিক জামায়াত নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে অন্তরীণ করে রেখেছে। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম বাদ দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড় ও গুমের মহোৎসব চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের দেশ, জাতি ও গণতন্ত্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের কারণে দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। দেশে গণতন্ত্র চর্চার অধিকার নেই, মিছিল মিটিং সমাবেশের অধিকার নেই। সরকার বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপ্রিয় কর্মসূচীতেও হামলা চালাচ্ছে। তিনি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবীতে এই ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনে সকলকে ঝাপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতৃবৃন্দসহ বিরোধী সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবী করেন।
ড. হেলাল উদ্দীন বলেন, পিলখানার নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও ন্যক্কারজনক ঘটনায় গোটা জাতি স্তম্ভিত ও বিশ্ববিবেক বিস্ময়ে বিহ্বল হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে অপশক্তি দেশে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল, সেনাবাহিনীর সমান্তরালে দেশে রক্ষীবাহিনী তৈরি করে গণমানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছিল তাদেরই নীলনকশার অংশ হিসাবে পিলখানা ট্রাজেডি ঘটেছে। আজ তাবেদারদের হাত হতে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখ- ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকলকে দেশপ্রেম ও ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, পিলখানার নির্মম হত্যাযজ্ঞ কোনো তাৎক্ষণিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার জন্য এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছিল। এ ঘটনায় মাত্র ২ দিনে ৫৭ জন সেনা অফিসার নিহত হয়। বাংলাদেশের জনগণ দেখেছে সেনাবাহিনী শুধুমাত্র দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরীই নয় বরং দেশে যখন বন্যা, খড়া, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নিকান্ড সহ যে কোন দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকে সেনাবাহিনী মানুষকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সেদিন শুধুমাত্র সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদেরকেই হত্যা করা হয়নি বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকেই হত্যা করা হয়েছে। তবে ইতিহাস সাক্ষী কোন ব্যক্তিকে হত্যা ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে কোন জাতিকে নিঃশেষ করা যায় না। তিনি এই ঘটনার পুনঃতদন্ত ও ষড়যন্ত্রের প্রকৃত কুশীলবদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।