বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আইএমএফ অর্থাৎ ইয়াজউদ্দিন-মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এই তিনজনের নেতৃত্বে বাংলাদেশে মিলিটারি ‘কু’ এর মাধ্যমে একটি সিভিল ব্যাক্ট বাই আর্মি নামীয় সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার অস্তিত্ত্ব বা কাঠামো রাজনৈতিক কোনো তত্ত্বে বিশ্ববাসী দেখেনি। পলিটিক্যাল সাইন্সে যেধরনের সরকার পরিবর্তনের নীতি-নিয়ম বলা আছে তার কোনটির সাথেই ১১ জানুয়ারির ঐ অবৈধ সরকারের কোনো মিল এর আগে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। বিশ্বাসঘাতকতা বাংলাদেশে নতুন কিছু না, এ অঞ্চলের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাসেও অনেক বিশ্বাসঘাতকের নাম জানা যায়। এ ভূ-খন্ডের মানুষ হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, জাতি হিসেবে আমরা কখনোই ষড়যন্ত্রের বাহিরে থাকার সুযোগ পায়নি। ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পরেও পশ্চিম পাকিস্তানিদের জোর খবরদারির কারণে এই ভূ-খন্ডের জনগণ নানাবিধ বঞ্চনা ও অধিকার হারা ছিলো। আবারও দীর্ঘ স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে অনেক ত্যাগ কুরবানীর বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও এদেশে এখনো সুষ্ঠু চিন্তা বা রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানুষের কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য, ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এখনো দেশের জনগণ সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ১১ই জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, যারা দেশ শাসন করার সুযোগ পেয়েছেন তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। অথবা হয়তো তারা তা করতে চাননি। তারা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র, আমাদের কালচার স্বকীয়তা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেননি। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য আজকে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশপ্রেমিক আদর্শবাদী যোগ্য নেতৃত্বের। যারা জনগণের আশা পূরণ করতে পারবে। জনগণের এই প্রত্যাশা পুরণের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াতের ইতিহাস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব সময়ে সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত আছে। আমরা কোনো দলের সাথে লেজুড়বৃত্তি করি না। যখন যে দল অন্যায় করেছে, আমরা তাদের সমালোচনা করেছি। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আমরা তাদের বিরোধীতা করেছি। দেশের মানুষ যখন অধিকার হারা হয়েছে আমরা তাদের দাবি আদায়ে লড়াই সংগ্রাম করেছি। কারণ আমাদের মূলনীতি যারা দেশের গণতন্ত্র হরন করবে, অন্যায় করবে, লুটপাট করবে, দুর্নীতি করবে, সেখানেই জামায়াত তার আদর্শের বলে বলীয়ান হয়ে সংগ্রাম করবে। কোনো একটি ষড়যন্ত্র একদিনে বুঝা যায় না, দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করে ১১ই জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২৮শে অক্টোবর লগি বৈঠা দিয়ে রাজপথে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ দিবালোকের মতো পরিস্কার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ঘোষণা দিয়ে বলেছে ১১ জানুয়ারির সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। এই দলটি সব সময়ে ফ্যাসিবাদী আচরণ করে এসেছে। তারা ক্ষমতা গ্রহণের জন্য যেকোনো কিছুকেই গ্রহণ করতে পারে। আজকে যদি সেই দিনের ঘটনাটি না ঘটতো তাহলে দেশের ইতিহাস আরও সুন্দর হতে পারতো। পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে যারা ১১ জানুয়ারিতে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছিল তাদের বিচার হওয়া দরকার। জামায়াতে ইসলামী এই দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে। আমরা জাতিকে এই কলঙ্কজনক দিনটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। দেশ পরিচালনায় একটি সঠিক ধারার সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্র গড়ে তুলতে চাই।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্যই ক্ষমতাগ্রহণ করেছিল। মূলত ২৮শে অক্টোবরের ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী কায়দায় দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে ১১ জানুয়ারির মঈন উদ্দিন ফখরুদ্দিনের সরকার ক্ষমতায় বসে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ঘোষণা দিয়ে বলেন এটা তাদের আন্দোলনের ফসল। আজ জনগণের ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি-দুঃশাসন গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে। মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের কোনো নিরাপত্তা নেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে আজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। আওয়ামী লীগ পর পর তিন মেয়াদে সরকারে থেকে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতি করে দেশকে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তারা আবারো অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাই। আগামী দিনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সৎ-যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। তাই দেশের গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে এবং জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, এদেশে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে বরাবরই আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য নানাবিধ কার্যক্রম করে থাকি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এবং আল্লাহ তায়ালার দেওয়া বিধানের আলোকে একটি সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। জনগণের এসব অধিকার আদায়ের আন্দোলনে একটি মহল সব সময়ে জামায়াতের বিরোধীতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। যারা গণতন্ত্রের কথা মুখে বললেও বাস্তবায়নে নেই কেবল তারাই আমাদেরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এসব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার মূল অর্জন গণতন্ত্রকে হারিয়ে দেশ আজ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিরোধী মতের লোকজনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরাধীনতার শিকল থেকে জাতিকে মুক্ত করে সুষ্ঠুধারায় রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশ গড়ার প্রয়োজনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই