বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একটি মহৎ লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। অথচ বিজয়ের ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশের জনগণের বহুল প্রত্যাশিত সেই স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র আজও দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী মাত্র ৩ বছরের মাথায় দেশের জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটিই দেশকে বিপথে ঠেলে দেয়। লুটপাট নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, তারাই এখন আবার দেশ পরিচালনা করছে। সার্চ কমিটির বৈঠক নামে আবারো জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতির সাথে প্রতারণার নাটক সাঁজানো হচ্ছে। তাই বিজয়ের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এবং শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি মহান বিজয় দিবসের এই দিনে যারা নিজেদের জীবন দিয়ে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন তাদেরকে গভীর ভাবে স্মরণ করেন এবং মহান আল্লাহ তায়া’লার কাছে সেই সকল বীর সেনানীদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন।
তিনি আজ ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহঃ সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। এছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি যথাক্রমে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ও মুহা. দেলাওয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইন, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য সৈয়দ সিরাজুল হক, আব্দুস সাত্তার সুমন, শাহীন আহমদ খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মহান বিজয় দিবসের এই দিনে জাতি গর্বিত ও আনন্দিত। বিজয়ের এই দিনে দেশবাসীকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ হতে শুভেচ্ছা মোবারকবাদ। স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এদেশে ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধকে পরস্পর বিপরীতমুখী হিসেবে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা চলছে। ৯২ ভাগ মুসলিম প্রধান এদেশের মানুষের জীবনে ধর্মীয় বিশ্বাস ওতোপ্রোতভাবেই জড়িত। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতেই ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম সহ পরবর্তী সকল আন্দোলনে এদেশের মুসলমানরা নেতৃত্ব প্রদান করেছিল। ইসলাম ছাড়া মানুষের কল্যাণের কোন পথই নেই। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গড়তে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধনতার প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিভক্তির রাজনীতি ও দোষারোপ করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট দেখলেই জাতি হিসেবে আমাদের মাথা লজ্জায় নিচু হয়ে যায়। বিজয়ের ৫০ বছর পর আজ বাংলাদেশে যে শিশু জন্ম গ্রহণ করে তার মাথার উপরেও ৩০ হাজার টাকার ঋণের বোঝা চেপে বসে। তাহলে প্রকৃত অর্থে আমরা কি অর্জন করেছি। তাই এখনই জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যারা দেশ পরিচালনা করেছেন তাদের দায়িত্ব ছিলো বিভেদের পরিবর্তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে নেয়া। কিন্তু তারা সে কাজ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের একক দাবীদার আওয়ামীলীগ প্রকৃত অর্থে বাকশাল গঠন করে দেশকে আরও গভীর সংকট ও ষড়যন্ত্রে আবদ্ধ করে ফেলেছিল। তিনি মহান বিজয়কে অর্থবহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশ গড়ার প্রয়োজনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।
আলোচনা সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রূহের মাগফিরাত, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের হেফাজত এবং দেশের মানুষের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।