বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, পবিত্র আশুরা আমাদেরকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আপোষহীন প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করে আছে এই আশুরা। তাই স্বৈরতন্ত্রের অবসানে আশুরার শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে পেশিশক্তির বলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বিরুদ্ধে ছিলেন ইমাম হোসেন (রা.)। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে তিনি রাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইয়াজিদ নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে তাঁকে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহিদ করে। তাঁর শাহাদাতের মধ্যদিয়ে স্বৈরতন্ত্রের সাময়িক বিজয় হলেও ইতিহাসে ইমাম হোসেন(রা) শ্রদ্ধাভরে স্মরণীয় হয়ে আছেন। কিন্তু যারা তাঁকে খুন করে ক্ষমতায় গিয়েছে তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই আজো যারা দেশে দেশে স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা আকড়ে রেখেছে তারাও একদিন এভাবে পর্যদুস্ত ও ঘৃণিত হবে। ইতিহাস তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেনা।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, মহানগরী দক্ষিনের সহকারি সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, আব্দুস সবুর ফকির, এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, মহানগরী দক্ষিনের মজলিশে শুরা সদস্য ও মতিঝিল থানা আমির সিরাজুল ইসলাম, রমনা থানা সেক্রেটারি আবদুস সাত্তার সুমন, পল্টন থানা সেক্রেটারি শাহিন আহমদ খান প্রমুখ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, আমাদের দেশে আশুরার উপলক্ষে যেসব কর্মসূচী পালিত হচ্ছে তা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার পরিপূরক নয়। তাজিয়া মিছিল, নিজের শরীর রক্তাক্ত করা সহ যেসব শোভাযাত্রা বের করা হয় তা ইমাম হোসেন (রা) এর আত্মত্যাগের শিক্ষার বিপরীত। ইসলামে বিনা প্রয়োজনে রক্তপাত বৈধ নয়। যারা এসব করছে তারা মূলত ইমাম হোসেন (রা) এর মূল চেতনাকে আড়াল করারই চেষ্টা করছে। তাই আমাদের সকলকে এসব বিষয়ে আরো সজাগ ও সচেষ্ট হতে হবে।
তিনি বলেন, আশুরা বহু আগে থেকেই ইসলামে গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে। শুধুমাত্র ইমাম হোসেন(রা.) এর শাহাদাতের ঘটনাই এ দিনটির সাথে সম্পৃক্ত নয়, অনেক নবী-রাসূল(স.) এর স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে আশুরা। তাই ইসলামে আশুরা এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আশুরার শিক্ষা বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা দেয়। রাতের আঁধারে মানুষের ভোট ডাকাতি করে এ সরকার গণতন্ত্রের দাফন সম্পন্ন করেছে। একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নেক্কারজনকভাবে হরণ করেছে। বিরোধী মতকে দমন করতে তারা মামলা-হামলা, গুম-খুন অব্যাহত রেখেছে। এই অগণতান্ত্রিক একদলীয় শক্তিকে মোকাবেলায় ইমাম হোসেন (রা) এর আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবীত হতে হবে। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে।