বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির মাস। তাই নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জন করাই মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা। এ মাসে মহান আল্লাহ বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ আল কুরআন নাজিল করেছিলেন বলেই এ মাসের মর্যাদা অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি। কুরআনের আলোকে সমাজ পরিচালিত হলে সমাজে অন্যায়, অনাচার, জুলুম, নির্যাতন থাকত না। এজন্য কুরআনের জ্ঞান-সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে আনতে পারলেই ন্যায়-ইনসাফ ও শান্তির সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব। ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ছাড়া সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সামাজিক বৈষম্য ও ধনী-গরিবের ব্যবাধান কমিয়ে আনতে মাহে রমযান হচ্ছে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ‘পবিত্র মাহে রমজানের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এর সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট কামাল হোসাইন, মোঃ শামছুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নুরুন্নবী, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, কামাল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সমাজের দারিদ্রপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের ক্ষুদ-পিপাসার দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করার জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর সিয়ামের বিধান দিয়েছেন। মূলত এ মাসেই বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করা হয়েছে। যা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্দেশকারী এবং মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক। কুরআনে মানুষের সকল সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে, এমন কী মানবাধিকার ও মানুষের মর্যাদাও নিশ্চিত করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে যাকাত, সদকা ও দানের অধিক ফজিলত প্রমাণ করে ইসলামের মর্মবাণী ও প্রকৃত শিক্ষাই হচ্ছে আর্ত-মানবতার কল্যাণ ও সেবা। জাগতিক জ্ঞান থাকা স্বত্ত্বেও শুধুমাত্র কুরাআনের জ্ঞানের অভাব ও শুন্যতায় জাতি আজ বিভ্রান্ত এবং সমাজ বিপর্যস্থ। জামায়াত সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে চায়। তিনি দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন। ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে জনাব বুলবুল বলেন, সরকার রমযানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এরফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। তিনি অবিলম্বে সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি আরোও বলেন, দেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ ও নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাবেক আমীরে জামায়াত শহীদ মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলংকিত করা হয়েছে। কিন্তু অতীতে যারাই ইসলাম নির্মূলের ষড়যন্ত্র করেছে, প্রকারান্তরে তারাই নির্মূল হয়েছে। তিনি সরকারকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াত সহ গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের ঈদের আগেই নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেন। অপরদিকে তিনি জামায়াত কর্মীদের বলেন দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জেল-জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে রমজানের শিক্ষা। ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার কাজে নিন্দুকের নিন্দা, মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার দ্বীনের কাজকে কোন ভাবেই বাধাগ্রস্থ করতে পারেনা রবং শত্রুদের নেতিবাচক প্রচারণা ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ইসলামী আন্দোলনের প্রতি মানুষের অগ্রহ বাড়িয়ে দেয় এবং আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে। তিনি সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ইসলামী আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
নুরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, বিশ্বময় মুসলিম নিধনের ধারাবাহিকতায় ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলী বাহিনী কর্তৃক নির্মম গণহত্যা চলছে। ঘাতক বাহিনীর হামলায় নারী ও শিশু সহ অসংখ্য ফিলিস্তিনি শাহাদত বরণ করছেন। মূলত ইসরাইলী আগ্রাসনে ফিলিস্তিন ও গাজা এখন রক্তের জনপদে পরিণত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বসহ শান্তিকামী বিশ্ববাসীকে সোচ্চার ভূমিকা পালনের আহবান জানান।