বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী নৃশংসতা ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়া নিরস্ত্র ও মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম গণহত্যা চালানো হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ, শিশু ও পঙ্গুদের ওপর দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর নির্মম নিধনযজ্ঞ ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে রক্তাক্ত করেছে। তিনি পবিত্র রমযান মাসের পুর্বমুহুর্তে ইসরাইলী দখলদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং গণহত্যায় জড়িত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ, ওআইসি ও আরব লীগসহ বিশ্বসংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
নিরস্ত্র ও মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলী গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আজ বুধবার ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মিছিলটি রাজধানীর শনির আখড়া থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন-ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরু সদস্য মতিউর রহমান, নিজামুল হক নাঈম, হাফিজুর রহমান, মুহিব্বুল্লাহ ফরিদ, আব্দুল বারী আকন্দ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি শফিউল আলম,ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পুর্বের সভাপতি সোহেল রানা মিঠু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ড. হেলাল বলেন, ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনি ভূমিতে জোরপুর্বক ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফিলিস্তিনিরা দিনটিকে ‘নাকবা’ বা ‘মহাবিপর্যয় দিবস’ হিসেবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মাধ্যমে পালন করে। ১৪ মে গাজায় মাতৃভূমিতে ফেরার ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের আন্দোলনরত নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলি সেনারা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের পাশবিকতায় শহীদ হয়েছেন ৫৯ ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২৭৭১ জন। যুদ্ধের সময় ছাড়া একদিনে ইসরাইলি হামলায় এত বেশি ফিলিস্তিনির হতাহত হওয়ার ঘটনা বিরল। গাজায় যখন গণহত্যা চলছিল ঠিক তখনি মুসলমানদের পবিত্র ভূমি বায়তুল মুকাদ্দাসে অবৈধভাবে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের জন্য মার্কিন সরকার উৎসব পালন করছিল। নাকবা দিবসের প্রাক্কালে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস চালু, ফিলিস্তিনিদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের তামাশা ও ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ করে না। অবিলম্বে জেরুজালেম থেকে মার্কিন দুতাবাস প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমিতে ফেরার ন্যায়সঙ্গত দাবী মেনে নিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষনার জন্য শান্তিকামী রাষ্ট্রসমূহের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
তিনি আরোও বলেন, অবৈধভাবে জন্মের পর থেকেই ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানামুখী অপতৎপরতা ও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিশ্বের শান্তিকামী মুসলমানদের জন্য ইসরাইল এক বিষফোঁড়ার নাম। ফিলিস্তিনিদের উপর নির্বীচারে গুলি বর্ষণ করে জায়নবাদী ইহুদীরা পৃথিবীর শান্তির ইতিহাসকে বারবার কলঙ্কিত করেছে। শুধু মুসলমানরাই নয় ইহুদীদের হাতে আজ পৃথিবীর কোন মানুষই নিরাপদ নয়। আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লক্ষ্য করছি, এ পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হবার পরও মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর ঘুম ভাঙছে না। পশ্চিমাদের খুঁটির জোরে টিকে থাকা বর্ণবাদী ইসরাইলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে বরাবরের মতোই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আবার কিছু রাষ্ট্র গোপনে ও প্রকাশ্যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়ে দখলদারদেরকে মানবতাবিরোধী নৃশংস অপরাধ চালাতে উৎসাহ দিচ্ছে। মুসলমানদের প্রথম কিবলা জেরুজালেম ও ফিলিস্তিনকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে হলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্ব মুসলিম উম্মার আপোসহীন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি মুসলিম রাষ্ট্রের শাসক হিসেবে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ মুসলিম বিশ্বের শাসকগোষ্ঠীর কাছে আহবান জানান।