বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, পৃথিবীর কোনো পুরস্কারই আসল পুরস্কার নয়। আল্লাহর সামনে আখেরাতে বিজয়ী হওয়া-ই হচ্ছে মানুষের চরম সফলতা। তাই আখেরাতমুখী জীবনযাপনে আমাদেরকে সর্বদা প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বর্তমান সরকারের সকল ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে, কুরআন সুন্নাহ্কে বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা। অথচ আধুনিক বিশ্বের সকল সংকট উত্তরণে রাসুল (সঃ)-এর আদর্শ অনুসরণই একমাত্র সমাধান। আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগে রাসূল (সঃ) ইসলামের সু-মহান আদর্শের মাধ্যমে যেভাবে পুরো জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলার এই সবুজ ভূখন্ডে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি সকলকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত রাসূলুল্লাহর (সা) জীবনীর উপর সীরাত পাঠ প্রতিযোগিতা-২০২২ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসেন খান ও ড. মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রত্যেক মুসলমানকে রাসূলের (সা) সীরাত তথা জীবনী জানতে হবে। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন জানা এবং তা অনুসরণ করা উম্মতের জন্য অতিব জরুরি, এটা ঈমানের-ই অংশ। তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রে কুরআন ও সুন্নাহকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কুরআনের এই বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ৮০টি’র উপরে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এবং ২৩ টি’র অধিক যুদ্ধে সেনাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই রাসূলের জীবনি অনুসরণ করে যদি আমরা জীবনযাপন করতে পারি তাহলে দুনিয়ার কোন প্রতিযোগীতায় পুরস্কার না পেলেও কাল কেয়ামতের দিনে আমরা নিশ্চিত পুরস্কার পাবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ভোটাধিকারকে হরণ করে নিবার্চন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ফলে এই সরকারের অধীনে আর কোনো সাজানো নিবার্চন নয়, নির্দলীয় কোয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার অধীনে নির্বাচনের মধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলেই দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে। ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যেতে হবে নতুবা জনগণকে সাথে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী চলমান আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রাসূল (সঃ) এর সীরাতকে সামনে রেখে ইকামতের দ্বীনের কাজকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি যেভাবে হিকমা ও কৌশল শিখিয়েছেন সেভাবে ইসলাম কায়েমের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তাহলে দুনিয়ার কোনো শক্তিই আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবেনা। স্বাধীনতা পরবর্তী যারা ক্ষমতায় এসেছে সুপরিকল্পিতভাবে জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সম্পুর্ণ অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। রাসূল (সঃ) এর যুগেও এই জুলুম নির্যাতন ছিল, তিনি যেভাবে সবকিছু সহ্য করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন ঠিক তেমনিভাবে আমাদেরও বাংলার জমীনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে। ইসলামের মানদন্ডে সবকিছু পরিচালনা করতে হবে। আজ বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে বাঁচার পরিবেশ নেই, সঠিক কথা বলার অধিকার নেই, নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কথা বললে যেকোনে সময় গুম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থা থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য এই সরকারের পতন ও কেয়াটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, রাসূল (সা) এর জীবনী অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে আরও ভালো ভাবে আত্মস্থ করতে হবে। মানবরচিত কোনো মতবাদ দুনিয়ার কোথাও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আজকের ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীর মানুষকে শান্তি দিতে পারে কেবল ইসলাম।
এড. ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, রাসূল (সঃ) আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগে আলোর মশাল জ্বালিয়ে ছিলেন ঠিক তেমনি বর্তমান আওয়ামী জাহেলি যুগকে আলোর যুগের রূপান্তর কারার জন্য বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রাসূল (সঃ) এর জীবন ও আদর্শকে সঠিকভাবে শিক্ষা না দেওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারতেছে না। আজকে পত্রিকার শিরোনামে নিয়মিত দেখতে পাই বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আমাদের বোনেরা যাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে তাদের কাছেও নিরাপদবোধ করছেনা ফলে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদেরকে নিয়মিত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতে থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে রাসূলের (সঃ) জীবন ও কর্মকে সঠিকভাবে শিক্ষা দিতে হবে এবং রাসুলুল্লাহর (সা) আদর্শকে ধারণ করে বাস্তব জীবনে তা কাজে লাগাতে হবে।
সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় যারা বিজয়ী হয়েছেন, ক-গ্রুপে প্রথম- সামমুদ্দোহা আব্দুল্লাহ্ শিবলী নোমানী, দ্বিতীয়- মুজাহিদুল ইসলাম, তৃতীয়- মো. সোলাইমান, চতুর্থ- জয়নাল আবেদীন, পঞ্চম- আবু জাফর। খ গ্রুপে প্রথম- ইদ্রিস হাওলাদার, দ্বিতীয় আ: হামিদ রুকন, তৃতীয়- হাসানুল বান্না, চতুর্থ-হাফেজ মহিবুল ইসলাম, পঞ্চম- শাহাদাত হোসাইন। গ গ্রুপে প্রথম- বনি ইয়ামিন মিয়াজী, দ্বিতীয়- গিয়াস উদ্দীন, তৃতীয়- মো: জাকির হোসেন, চতুর্থ- তমিজ উদ্দিন সরোয়াদ্দী, পঞ্চম- শরিফুল ইসলাম। বিজয়ীদের নগদ টাকা, আকর্ষণীয় বই সেট ও ক্রেস্ট উপহার প্রদান করা হয়।