বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য নিবন্ধন জরুরী নয়। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, মিছিল করার জন্য নিবন্ধন কিংবা অনুমতির প্রয়োজন নেই। ৩টি মৌলিক দাবিতে আগামী ৫ জুন রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এই সমাবেশ বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই সমাবেশে বাঁধা দেওয়া মানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাঁধা দেওয়া, গণতন্ত্রের পথে বাঁধা দেওয়া। তিনি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমাবেশের অনুমতিপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা বিশৃংখলা চাই না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি বলেন, ৫ জুনের সমাবেশের অনুমতি জনগণ দিয়েছে। তাই আপনারা বাড়াবাড়ি করবেন না। তিনি নগরবাসীকে দলে দলে সমাবেশে যোগদান করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
আগামীকাল ৫ জুন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ বাস্তবায়ন উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, মাওলানা আবু সাদিক, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, অধ্যাপক নুরুন্নবী, আবু জয়নব, সিরাজুল ইসলাম, আবু ওয়াফি, মহানগরীর মজলিসে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট তার শরীকরাও প্রত্যাখ্যান করেছে। এই বাজেট একটা ভারসাম্যহীন, বায়বীয়, ঋণনির্ভর বাজেট। এতে জনগনের কোনো কল্যাণ নেই। মধ্য ও নিম্মবৃত্তের মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। আমরা এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। তারা বারবারই একই কথা বলছেন। তারা আসলে সত্য বলছেন না বলেই এই কথা বারবার বলছেন। তারা উন্নত দেশের কথা বলছেন। আমি তাদের বলবো, উন্নত দেশের মধ্যে এমন ৩টি দেশের নাম বলুন, যে দেশে দিনের ভোট আগের রাতেই হয়েছে। বর্তমান সরকার যে কোন উপায়ে নির্বাচন করতে চায়। এখন ২০১৪ বা ২০১৮ সাল নয় এবং সেই পরিবেশও আর নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের উত্তম সমাধান হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করা। কেবলমাত্র কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই বিরোধী দলের থাকতে পারবেন। আওয়ামীলীগ যদি আবারো ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চায়, তাহলে এই সরকার টিকবে না। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তাই কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে নিদর্লীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এখনই পদত্যাগ করুন। সংগ্রাম করে, কঠোর কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নয়, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আর যদি সেটা না হয়, আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে। পরিস্থিতি এখন আপনাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে আপনারাতো আগে থেকেই জানতেন। তখন জনগনকে জানালেন না কেন? ঘোষণা হওয়ার পর বললেন, এটা বিরোধী দলের জন্য। এখন কী উল্টো হয়ে গেলো? তিনি বলেন, আমরা অভ্যান্তরীন বিষয়ে বাইরের হস্তাক্ষেপ পছন্দ করি না। ভিসা নীতি গোটা জাতিকে অপমানিত করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বৈধ সংগঠন। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। কারো মুখের কথায়, শব্দ চয়নে জামায়াতের অবস্থান পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য নিবদ্ধন জরুরী নয়। নির্বাচনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন নিতে হয়। জামায়াতে ইসলামী বৈধ, রেজিষ্ট্রার্ড রাজনৈতিক সংগঠন। জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ষড়যন্ত্রের কারনে উচ্চ আদালতে নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। যা এখন বিচারাধীন রয়েছে। বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই শান্তিপূর্ন সভা সমাবেশ করে আসছে। প্রয়োজনে সেখানে স্থায়ী মঞ্চ গড়ে তোলা হবে। আমরা বিশৃংখলা চাই না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা গত ২৮ মে তারিখে ঢাকায় মিছিল সমাবেশে সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপি-তে আবেদন করেছি। একই কপি আমরা স্বশরীরে আইনজীবীদের মাধ্যমেও পুলিশ কার্যালয়ে জমা দিয়ে এসেছি। দেশের সুপ্রিম কোর্টের সম্মানিত আইনজীবীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আবেদন পত্রটি নিয়ে গেলে তাদের সাথে যে ন্যাক্কারজনক আচরণ করা হয়েছে, তা পুরো জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা রাজধানীতে শান্তিপুর্ণ মিছিল ও সমাবেশ করতে চাই। সরকার তাতে সহযোগিতা করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। তিনি বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, যে বাজেট দেশে পেশ করা হয়েছে তা গরীব মারার বাজেট। দেশের উন্নয়নের নামে লুটপাটের আরও সুযোগ তৈরি করতেই ঋণনির্ভর এই বাজেট তৈরী করা হয়েছে। এই বাজেটে যেসব খাতে কর নেই সেসব খাতেও কর আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। কর দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয় যারা তাদের প্রতিও কর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই বাজেটের মধ্য দিয়ে সরকারের সেচ্চারিতা প্রকাশ পেয়েছে। আজ দেশের উন্নয়নের চেয়ে বড় বেশি প্রয়োজন এই অবৈধ ভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করা। তিনি আগামী ৫ জুন জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল সফল করতে দলে দলে অংশগ্রহণ করতে ঢাকাবাসীসহ জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।