পবিত্র সিরাতুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে “ব্যাক্তি ও সমাজ গঠনে রাসূল (সাঃ)” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগরী আমীর (ভারপ্রাপ্ত) ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য এ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালীম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা হালীম বলেন, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সময়ে ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি সভ্যতা। বর্বর, বেদুঈন, যাযাবর, শিক্ষা ও তমুদ্দিনের আলো থেকে বঞ্চিত একটি জাতি। অন্যায় জুলুম ও অনৈতিকতার সয়লাব চারিদিকে, যেখানে ভুলুন্ঠিত হচ্ছিল মনুষ্যত্ব প্রতিনিয়ত। তখনো মানবজাতি আদিম জাহেলিয়াতের ঘুম থেকে জাগেনি। ঠিক সেই সময় অরাজকতার ঘুটঘুটে অন্ধকারে আকস্মিকভাবে জ্বলে উঠলো আলোক মশাল। সভ্যতার সূর্যোদয়ের দায়িত্ব নিয়ে ৫৭০ খৃস্টাব্দের ১২ই রবিউল আওয়াল পৃথিবীতে আবির্ভূত হলেন সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁর যাদুর ছোঁয়ায় নবুওয়াতের মাত্র ২৩টি বছরে আরবরা বিনির্মাণ করলো এক নতুন পৃথিবী। জীবনের ক্ষতস্থান থেকে যে উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল তা রাসুল (সাঃ) এর পরশে পরিবর্তিত হয়ে সুবাসিত আলোকবর্তিকায় পরিণত হল। তাই সামাজিক অবক্ষয় রোধ, অন্যায়-জুলুম ও অনৈতিকতার হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে ইনসাফপুর্ন, শান্তিময় ও সমৃদ্ধশালী করার জন্য আমাদেরও রাসুল (সাঃ) এর আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যে বিস্ময়কর মহাশক্তির মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) বিপ¬ব সাধন করেন, যা দিয়ে পাল্টে দিয়েছিলেন সমগ্র পৃথিবীকে, পাল্টে দিয়েছিলেন ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা ও মানুষের হৃদয়কে তা হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন। সেই আল কোরআন আজও আমাদের মাঝে বিদ্যমান। আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য মহাগ্রন্থ আল কোরআন নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করতে হবে। এছাড়াও ন্যায়বিচার ও মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতি হিসেবে আল-কোরআনকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।
মাওলানা হালীম আরোও বলেন, রাসূলের রেখে যাওয়া সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ থেকে মুসলমানরা বিমুখ হওয়ায় বর্তমান বিশ্বে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ইসলাম বিরোধীদের হাতে ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মীর সহ পৃথিবীর সর্বত্র আজ লাখো লাখো মুসলমান নিহত হচ্ছে। অন্যায়, অবিচার আর বর্বরতার সীমা আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়কেও ছাড়িয়ে গেছে। তাই অশান্ত এই পৃথিবীতে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ (সাঃ) এর মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। বর্তমানে যারা রাসূলের রেখে যাওয়া আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছেন তাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কাফের ও মুসলিম নামধারী কিছু মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। ঐক্যবদ্ধ ভাবে সকল জুলুম-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র মুকাবেলা করেই আমাদেরকে সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করে বিজয়ের মঞ্জিলে নিয়ে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. হেলাল বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় রাসুলের আদর্শকে বাদ দিয়ে সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মানবতার বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থায় রাসুলের সীরাত ও আদর্শকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার আহবান জানান। তিনি আরোও বলেন, উগ্র ও চরমপন্থা ইসলাম কায়েমের পথে অন্যতম বাধা বা অন্তরায়, তিনি রাসুলের সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলকে উগ্রপন্থা পরিহার করার আহবান জানান।
ড. হেলাল আরোও বলে, রাসুল (সাঃ) মানুষের অধীকার রক্ষায় অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছেন। বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতার সামাজিক অবক্ষয় ও পতন রোধ করে মানবতাবোধ জাগ্রত করার জন্য, মানুষের অধীকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের রাসুল (সাঃ) শিক্ষা ও আদর্শ সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আলোচনা সভায় আরোও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, মুহাম্মদ কামাল হোসাইন, মহানগরী মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা রুহুল কুদ্দুস, আব্দুর রহীম, মাওলানা আমীরুল ইসলাম। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পূর্ব সভাপতি সোহেল রানা মিঠু, ঢাকা মহানাগরী দক্ষিন সভাপতি শাফিউল আলম প্রমূখ।
এছাড়াও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানায় রাসুল (সাঃ) এর সীরাতের উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।