পবিত্র মাহে রমযান এসেছে রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মহান সওগাত নিয়ে। রমযানের পবিত্রতা রক্ষা, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে তাকওয়া অর্জন এবং কুরআনের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য নগরবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি নগরবাসীকে পবিত্র মাহে রমযানের শুভেচ্ছা জানান।
গতকাল শনিবার দেয়া বিবৃতিতে মহানগরী দক্ষিণের আমীর বলেন, বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার এলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমযান। ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষের হেদায়াত এবং মুক্তির নির্দেশনা দিয়ে এ মাসেই আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনুল ক্বারিম নাযিল করেন। কুরআন নাজিল হওয়ার কারণেই রমযান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। দীন ইসলামের শ্রেষ্ঠ গাইডবুক আল কুরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত ও মু’জেজা। পবিত্র কুরআনের যথাযথ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে মানবজাতির একমাত্র উন্নতি, অগ্রগতি ও প্রকৃত কল্যাণ। বর্তমান সংঘাতময় পৃথিবীতে পবিত্র কুরআনই মানবতার একমাত্র মুক্তি সনদ।
মহানগর দক্ষিণের আমীর বলেন, পৃথিবীর মুসলমানগণ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দিকে দিকে মুসলমানদের উপর ইসলাম বিরোধী শক্তি জুলুম-নিপীড়নের স্টিম রুলার চালাচ্ছে। হিম্মতহারা-অধিকারহারা হয়ে মুসলমানগণ আজ এক অসহায় জাতিতে পরিণত হয়েছে। উম্মতে মুহাম্মদীর এই দুর্গতি ও পশ্চাদপদতার পেছনে পবিত্র কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন কারণ থাকতে পারে না। পবিত্র কুরআনে পাকের যথাযথ অনুসরণই মানব জাতিকে দু-জাহানের কামিয়াবী ও সফলতা দান করতে পারে।
জনাব বুলবুল বলেন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস পবিত্র মাহে রমযান। শুধু পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম সাধনা নয় বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে দুনিয়াবি সকল লোভ-লালসা ও ইন্দ্রিয়পরায়নতার উর্ধ্বে থেকে একটি ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ ত্যাগ-কুরবানী করাই রমযানের প্রকৃত শিক্ষা। সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য হলো ‘তাকওয়া’ বা আল্লাহভীতি অর্জন করা। মানুষ উৎকৃষ্ট খাবার সামনে থাকার পরও সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত একমাত্র আল্লাহর ভয়ে যেমনি অনাহারি থাকবে তেমনি জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিস থেকে নিজেকে বিরত রাখবে এটাই রমযানের শিক্ষা। এ মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজের সমান ফজিলত এবং এ মাসের একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০ টি ফরজের সমান ফজিলত বহন করে। রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রজনীতে এমন এক মহিমান্বিত রাত আছে যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। তাই এই মহিমান্বিত রজনী ও মাসের হক যথাযথভাবে আদায় করে সকলকে আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রমযানের আরেক শিক্ষা হলো অনাহারে থেকে ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করার মাধ্যমে অভাবী-দরিদ্রদের অবস্থা উপলব্ধি করা। সহানুভূতি ও দয়াদ্র মন নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। জনাব বুলবুল আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান সরকার দেশের দরিদ্র-অভাবী মানুষের সমস্যা সমাধানের চেয়ে যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকায় চেষ্টায় লিপ্ত। রমযান মাস শুরুর আগেই দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার অনেক বাহিরে। চাল-ডাল, ছোলা-মুড়ি, সবজি-তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে সাধারণ মানুষের পক্ষে পেট ভরে খেয়ে রোজা পালনই কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। রাজধানীতে বিদ্যুৎ এবং কোন কোন এলাকায় গ্যাসের সমস্যাও প্রকট। রোজার মাসে এদিকে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি।’
মহানগরী দক্ষিণের আমীর বলেন, রমযানের পবিত্রতা রক্ষার্থে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা-নগ্নতা বন্ধ করতে হবে। হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ, সিনেমা হল ও পোস্টার প্রদর্শনী বন্ধ এবং উচ্চ আওয়াজে রেডিও, টিভি চালানো বন্ধসহ রমযানের ভাব-গাম্ভীর্যতা ধরে রাখতে সকল কার্যকরী পদক্ষেপ সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পবিত্র মাহে রমযানের শিক্ষাকে আমরা যদি ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফল ঘটাতে পারি, তাহলেই রোজা আমাদের জন্য সফল ও সার্থক হবে। সরকার মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে এবং রমযান মাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশ থেকে সকল অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, ঘুষ-দুর্নিতি বন্ধ করে দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। সাথে সাথে জনগণকে রমযানের সংযম ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আত্মউন্নয়ন, পরোপকার, কল্যাণচিন্তা ও ইসলামের বাস্তব অনুসরনের উদাত্ত আহবান জানান নূরুল ইসলাম বুলবুল।