বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের পূজা মন্ডপ ভেঙে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করে হিন্দুদের সম্পদ দখল করেনি। স্বাধীনতার পরবর্তী অদ্যাবধি জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী দলের কোন নেতাকর্মী হিন্দুদের ঘর-বাড়ি দখল করেনি, পূজা মন্ডপ বা তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় ভাঙেনি। এতো দিন আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতনের ভয়ে হিন্দুরা কথা বলতে পারেনি। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের মাধ্যমে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতায় এ দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে। সেই সাথে হিন্দুরাও এখন স্বীকার করছে, বিগত সময়ে তাদের উপর আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যরা জুলুম করেনি।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে কদমতলী মধ্য থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ সহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশ্যে স্বীকার করে গেছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী কোন দলের নেতাকর্মীরা জুলুম করেনি। বরং ০৫ আগস্ট থেকে ০৮ আগস্ট সরকারবিহীন রাষ্ট্রে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সম্পদ পাহাড়া দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম করে জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর নয়, সমাজের কোন মানুষের উপর জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা জুলুম করেনি, করবে না। বরং জামায়াতে ইসলামী এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার কারণে বারবার জামায়াতে ইসলামী উপর রাষ্ট্রীয় মদদে জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী লড়াই চলবেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী যদি ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে মাথানত করতো তবে দলের আমীর, সেক্রেটারী জেনারেল সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি বরণ করতে হতো না। জামায়াতে ইসলামী নেতারা ফাঁসি মেনে নিয়েছে, ভারতীয় আধিপত্যবাদ মেনে নেয়নি, নিবে না। জামায়াতে ইসলামী একমাত্র দল যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিয়েছে তবু স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিক্রি করতে দেয়নি। অথচ যারা নিজেদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে গলাবাজি করে তাদেরাই ক্ষমতার জন্য ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে স্বাধীনতাকে বর্গা দিয়েছে। বর্গা দেওয়া স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। ছাত্র-জনতা সেই স্বাধীনতা ৫ আগস্ট ফিরিয়ে এনেছে।


জামায়াতে ইসলামী একটি মানবিক সমাজ গঠন করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেই সমাজে মারামারি, হানাহানি, নৈরাজ্য, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি থাকবে না। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে মূল্যায়ন করা হবে না, প্রতিটি মানুষ দেশের নাগরিক হিসেবে সমানভাবে মূল্যায়িত হবে। এটাই ইসলামী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণ জামায়াতে ইসলামী অঙ্গিকার। সেই রাষ্ট্র বিনির্মাণে তিনি দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।


কদমতলী মধ্য থানা আমীর মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রীতি সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্যামপুর-কদমতলী জোন পরিচালক মহানগরীর কর্মপরিষদের সদস্য সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য কদমতলী পূর্ব থানা আমীর ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন, মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য ও জোন টিম সদস্য মাওলানা মো. নেছার উদ্দিন, মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য কদমতলী পশ্চিম থানা আমীর মো. কবিরুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে শ্যামপুর-কদমতলী জোনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।