বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মিরাজ ইসলামের ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোর অন্যতম। নবী মুহাম্মাদ সা:-এর মিরাজের ঘটনায় পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে সেই আলোকে কুরআনে বর্ণিত ঐতিহাসিক ১৪ দফার বাস্তবায়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এই ১৪ দফা মাইলফলক ও গাইড লাইন হিসেবে রয়েছে। তিনি মেরাজের নির্দেশনা মোতাবেক দেশকে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্দোলনে সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান। মেরাজের ঘটনাকে অস্বীকার করলে মুসলমান থাকতে পারবেন না। রাসূলকে সা. আল্লাহ মিরাজের দিনে কিছু অগ্রিম দৃশ্য দেখিয়ে মুসলমানদের জন্য শিক্ষা প্রদান করেন। একজন ধর্ষণকারীর শাস্তি কি হবে? সুদখোরের শাস্তি কি হবে? সেসকল বিষয়ে সরাসরি নবী সা. কে আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন। ফলে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে মিরাজের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
আজ শনিবার বিকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে পবিত্র মিরাজুন্নবী (সা) উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসাইন ও কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আব্দুস সাত্তার সুমন, আশরাফুল আলম ইমন, শাহিন আহমদ খান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা) ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনের অন্যতম অলৌকিক ঘটনা হলো এই মিরাজ। বর্তমান সময়ের এই অশান্ত পৃথিবীকে শান্তির পয়গাম দিয়ে যায় রাসূলের সা: পবিত্র শবে মি‘রাজ। মুহাম্মদ সা:-এর জীবনী আমরা যদি ভালোভাবে দেখি এটা স্পষ্ট হয় যে, মহান আল্লাহ তাকে স্বশরীরে পরিভ্রমণ তথা মিরাজে নিয়ে গিয়েছেন। কুরআনেও বলা হয়েছে তাকে রাত্রে ভ্রমণ করানো হয়েছে। মিরাজ স্বশরীরেই হয়েছিল। সে কথা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেছিলেন আবু বকর রা:। তাইতো তাকে সিদ্দিক উপাধি দেয়া হয়েছিল। এখন আবু বকর সিদ্দিক রা:-এর মতো ঈমানদার মানুষ প্রয়োজন। এই মহিমান্বিত রজনীতে আল্লাহ তা‘য়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। নামাজ সমাজ গড়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। নামাজ মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। তিনি মিরাজের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে জীবন গঠনের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, আজকে ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পৌত্তলিকতা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। আমরা এই শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে মুসলমানদের ঈমান ও আক্বিদার ভিত্তিতে নতুন পাঠ্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছি। আজ আমাদের দেশে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, জনগণের সেবায় নিয়োজিত প্রশাসনের লোকেরা স্বামীকে মুক্ত করার বিনিময়ে স্ত্রীকে অশালীন কুপ্রস্তাব দিচ্ছে। এটা খুবই লজ্জার বিষয়। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। অসৎ নেতৃত্ব পরিহার করে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে যার যেখানে যতটুকু সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। তিনি মিরাজের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মিরাজ’ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ মুজিজা এবং আল্লাহর কুদরতের মহানিদর্শন। মিরাজের আলোচনায় বর্ণিত ১৪ দফার অন্যতম একটি দফা হচ্ছে, অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা যাবে না। আজ বাংলাদেশে জায়ামাতের কেন্দ্রীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে এই জালিম সরকার হত্যা করেছে। আল্লাহ অবশ্যই এর সঠিক বিচার করবেন ইনশাআল্লাহ। আরও একটি দফা হচ্ছে অন্যের হক নষ্ট না করা। আজ বাংলাদেশর জনগণ নানাবিধ হক হতে বঞ্চিত। মেরাজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাথে মিরাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। সুতরাং নামাজ সঠিক ভাবে আদায় করতে হবে। মিরাজের আলোচনায় বর্ণিত এই ১৪ দফা ব্যক্তি পরিবার রাষ্ট্র সবখানে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, মিরাজের শিক্ষাকে অনুধাবন করে আমরা কি নিজেদেরকে তৈরী করতে পারছি? রাসূল (সা.) এর সময়ে আবু জেহেল আবু লাহাব তারা এই মিরাজকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য বুদ্ধিজিবী নিয়োগ করেছিল। এই পবিত্র মিরাজ কাউকে সিদ্দীক বানিয়েছে আবার এই মিরাজ কাউকে মুরতাদ বানিয়েছে। তাই মেরাজের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মিরাজ হচ্ছে একেবারে দুর্দিনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চূড়ান্ত বিজয়ের দিক নির্দেশনা। চতুর্দিক থেকে প্রিয় রাসূল সা:-কে কাফের মুশরিকেরা যখন বিপর্যস্ত করতে লিপ্ত ছিল। ঈমানের সাথে থাকতে গেলে গর্দান চলে যাবে এরকম অবস্থায় মিরাজ সংঘটিত হয়। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশে একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করছি। মিরাজের শিক্ষাকে অনুধাবন করে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। আমাদের ঈমানকে মজবুত করতে হবে।