বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেছেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। সরকার তার সামগ্রিক ব্যর্থতায় দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এমতাবস্থায় রুকন (সদস্য) ভাইদের পিছনে থাকার কোনো সুযোগ নেই। দেশের এই ক্রান্তিকাল উত্তরণে সাহাবায়ে আজমাইনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যেক রুকনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সংগঠনের আহ্বানে ভয় ভীতির তোয়াক্কা না করে ইকামতে দ্বীনের কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জামায়াত সবসময় অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এখন সময় এসেছে, জান-মালের কুরবানীর বিনিময়ে হলেও জুলুমবাজ সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয়ী হতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলন ও বার্ষিক পরিকল্পনা ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শনিবার রাতে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণে আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত এই সদস্য (রুকন) সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবু ফাহিম সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমীরবৃন্দ।
অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলনের খুঁটি হলো রুকনরা। রুকনরা ঠিক থাকলে ইসলামী আন্দোলনের প্রসাদ মজবুত থাকে। রুকনদের ব্যক্তিগত-পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সফলতার মাধ্যমেই ইসলামী আন্দোলনের সফলতা। আমাদের দাওয়াত হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে এক রব এবং রাসূলকে (সা) আমাদের নেতা মানা। একইসাথে সমাজ থেকে অসৎ নেতৃত্ব বিদায় করে সৎ, যোগ্য, মেধাবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। সমাজে যে অসৎ নেতৃত্ব আল্লাহ নাফরমানী করবে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। সংগঠনের রুকনদের ঋণমুক্ত জীবন যাপন করে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আধুনিক জাহিলিয়াত থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের ইকামাতে দ্বীনের কাজ সম্পর্কে বুঝাতে হবে। পরিবারের মধ্যে রাসুল (সা) এর সুন্নাহ অনুসারে ইসলামী আন্দোলনের পরিবেশ বানাতে হবে। সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের উত্তম তাকওয়া, উন্নত চরিত্রের অধিকারী এবং নামাজী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের অসিয়ত পুরন করতে হবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে, গরীব আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের খোঁজ খবর রাখতে হবে বিপদে-আপদে সহায়তা করতে হবে। মানুষের হক আদায় করতে হবে এবং কারো হক নষ্ট করা যাবে না। এলাকার দুঃস্থ অসহায় মানুষদের সেবা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ২০২৪ সালের সংগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রত্যেক রুকনকে ময়দানে তৎপর হতে হবে। জামায়াত কর্মী মানেই সমাজকর্মী। ফলে প্রত্যেক রুকনকে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করে গণজাগরণ তৈরি করতে হবে। বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে যেতে হবে। সমাজে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অসচ্ছল ছাত্রদের মাঝে শিক্ষার উপকরণ তুলে দিতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রত্যেক পাড়ায় মহল্লায়, ঘরে ঘরে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারকে হরণ করেছে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলবে। এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, রুকনদের শপথের শর্ত অনুযায়ী আল্লাহর পথে জান ও মালের কুরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আল্লাহর রুবুবিয়াত প্রতিষ্ঠায় খলিফা হিসাবে আমাদের কাজ করতে হবে। নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও জুলুমবাজ সরকারের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, প্রচলিত জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মুকাবেলা করতে অধ্যায়নের কোনো বিকল্প নেই। ইকামাতে দ্বীনের কাজ করতে হলে কুরআন, সুন্নাহ ও সমকালীন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যুগের ফিতনা সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বিশেষ করে রুকনদের প্রতিদিন ব্যাপকভাবে অধ্যায়ন করতে হবে।