বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, ইউনিট দায়িত্বশীলদের সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে। ইউনিট সভাপতি সেক্রেটারিদের দেখেই সাধারণ মানুষ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ভালো-মন্দ ধারণা পোষণ করে থাকে। ফলে আপনাদেরকে সবরের মাধ্যমে দ্বীন কায়েমের কাজকে এগিয়ে নিতে হবে। আর যে কোন পরিস্থিতিতে সাহসিকতার সাথে নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতার আলোকে ময়দানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপরে ভরসা বা তায়াক্কুল করতে হবে। প্রত্যেক পাড়ায় মহল্লায় সকলের কাছে আমাদের দাওয়াত পৌছাতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইসলামের সু-মহান আদর্শের আলোকে গড়ে তুলতে হবে। পরিবার রাষ্ট্র সমাজ সবক্ষেত্রে নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে হবে। এজন্য আধিপত্যবাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মুকাবেলা করে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে দায়িত্বশীলদের আল্লাহর উপর তায়াক্কুল করে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ইউনিট দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলোয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন থানার আমীর সেক্রেটারি সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এ.টি.এম মাসুম বলেন, সংগঠনের ইউনিট পর্যায়ে অর্থাৎ স্থানীয় কার্যক্রম যতো বেশি শক্তিশালী হবে সামগ্রিকভাবে থানা, মহানগরী ও কেন্দ্রীয় সংগঠন ততো সুদৃঢ় হবে। যেখানে যতবেশি বিপর্যয় এসেছে সেখানে দ্বীনের দাওয়াত আরো ব্যাপকতর হয়েছে। ফলে কোন ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক বাঁধা দেখে ভয় পেয়ে হতাশ হওয়া বা কাজ কমিয়ে দেওয়া ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য উচিৎ নয়। কুরআন ও হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি ইসলামী আন্দোলন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশি মজবুতি অর্জন করেছিল। সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের যথাযথ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দ্বীনের বিজয়কে তরান্বিত করতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিনদেরকে ভয়, ক্ষুধা ও জান-মালের ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। সেখানে যারা ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে উত্তীর্ণ হয় তারই প্রকৃত সফলতা লাভ করে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এলাকা দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এমন একটি এলাকার দায়িত্বশীল হিসেবে প্রত্যেক মহল্লায় ইউনিট পর্যায়ে সংগঠনের দাওয়াত ও ইকামাতে দ্বীনের কথা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব। এখানে সংগঠন সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে গোটা দেশেই জামায়াতের মূল কার্যক্রমকে সার্বিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। সেই সাথে মনে রাখতে হবে আমরা দেশের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এলাকায় অবস্থান করছি। সমাজের মানুষের কল্যাণ ও সেবার মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকতে হবে। অহংকার, রিয়া ও নফস এই জিনিস গুলোর বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। এর মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সংগঠনও ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এই ব্যধি গুলো যেন ইউনিট সভাপতি সেক্রেটারি দায়িত্বশীল ভাইদের ভিতরে না থাকে। আল্লাহর দ্বীনের কাজ হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে এবং কেয়ামতের কঠিন দিনে নাজাত পেতে আমাদের সকল তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইউনিট সভাপতি সেক্রেটারিদের ব্যক্তিগত সকল কাজের মাঝেও দ্বীনের এই মহান দায়িত্বকে সঠিক ভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেদের ও সংগঠনের ভারসাম্যপূর্ণ কাজের সমন্বয় করতে হবে। একই সাথে আমাদেরকে বহুবিধ যোগ্যতা ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ইকামাতে দ্বীনের একাজে একনিষ্ঠ হয়ে সবার কাছে সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিতে হবে। সফলতা ও বিপ্লবের জন্য একটি সুদৃঢ় ক্ষেত্র প্রস্তুত করা খুব জরুরি। ইসলামী আন্দোলনের পথে বাঁধা আসবে এটা স্বাভাবিক, এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করেই ইসলাম বিজয়ী হয়েছে। খোদাভীতি, মেধা, প্রজ্ঞা ও বিবেকবোধের আলোকে নিজেকে ও সংগঠনকে পরিচালনা করতে পারলেই কেবল আমাদের প্রতিটি স্তরের সাফল্যের পাশাপাশি পরকালীন মুক্তি লাভ সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।