বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল আজ ১৮ ডিসেম্বর সোমবার রাজধানীর পল্টন এলাকায় অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার জণগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যখন নিদারুণ কষ্টের মধ্যে রয়েছে, সরকার তখন আবারো আরেকটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। জনগণ এবার সরকারের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দিবে না। সারাদেশে তীব্র শীতে গরম কাপড়ের অভাবে অসহায় মানুষ নিদারুণ কষ্টের মধ্যে রয়েছে অথচ সরকারের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। বিগত দিনগুলোতে সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সরকার তেমন কিছুই করেনি। সে সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ সব বন্যাপীড়িত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে শুরু থেকে পুনর্বাসন পর্যন্ত ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। যা দেশবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিন মহানগরীর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভিত্তিক কর্মসুচি পালন করে যাচ্ছে। যার মধ্যে একটি কর্মসুচি হলো শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। আজকে এটি উদ্বোধন হলো। আমরা মহানগরীর শীতার্ত সকল মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে তাদের এই প্রাপ্ত অধিকার দিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মহান আল্লাহ তায়ালা এ কাজে আমাদের সাহায্য করুন। এ ক্ষেত্রে বিত্তবান মানুষকে এ কাজে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। আমরা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এই কাজগুলো করছি। কারণ এটা ইসলামের নির্দেশ। এ নির্দেশ থেকেই জামায়াতে ইসলামী তার ৪ দফা কর্মসুচির মধ্যে ৩য় দফা কর্মসুচিতে সমাজসেবা কর্মসুচি অন্তর্ভুক্ত রেখেছে।
আজ ১৮ই ডিসেম্বর সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মু. দেলাওয়ার হোসাইন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরা সদস্য শাহীন আহমদ খান ও আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বিজয়ের ৫২ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো দেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ ও তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আজ ঘরের মধ্যেও তারা মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে পারছে না। বিজয় দিবসের আলোচনা সভাতেও অভিযান চালিয়ে পুলিশ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। আজ এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নেই, বাক স্বাধীনতা নেই। অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের জনগণকে মুক্ত করতে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং অবৈধ সরকারের পতনের জন্য রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করছি। তিনি এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, রাতের ভোটে ক্ষমতা দখলকারী এই অবৈধ সরকার তাদের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে জনগণের আন্দোলনকে দমন করতে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। গত ২৮ অক্টোবর জামায়াতের মহাসমাবেশে পুলিশ প্রশাসন আমাদের নেতাকর্মীদের পায়ে রাইফেল ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করেছে। বিএনপির মহাসমাবেশে গুলি চালিয়ে, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে যুদ্ধাবস্থা তৈরির মাধ্যমে সমাবেশ পন্ড করেছে। সেই থেকে অধ্যবধি দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আর কোনো কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। দেশের বিরোধী দলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৮ ডিসেম্বর থেকে দেশে সভা সমাবেশ সহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে, এটা স্বাধীন দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার শামিল। এই অপশক্তির হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের সকল অপতৎপরতা রুখে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একদিকে ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে দেশ,জনগণ ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলন করছি। অপরদিকে যেকোনো দুযোর্গ দুর্ভোগে জনগণের পাশে সবার আগে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি জামায়াতের এই কল্যাণমূলক কাজে সকলকে সার্বিক সহযোগিতা করার আহবান জানান।