বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামায়াত এ আন্দোলন-সংগ্রাম ও নানা বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়েছে। এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে বহু ধরণের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং দায়িত্বশীলদের মনে রাখতে হবে, সামনে যতো বড় বাঁধাই আসুক না কেন আমরা তার কোনো পরোয়া করি না। আন্দোলনে যখন যে ডাক আসবে তাতে সাড়া দিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমেই এদেশে সৎ লোকের নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনা হবে। সরকার যত ষড়যন্ত্র করবে জনগণের অধিকার আদায়ে রাজপথের আন্দোলন তত শক্তিশালী হবে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ বিরোধী দলীয় সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে এবার আরও কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দাবি শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের সকল আন্দোলন হবে আপোসহীন ও শান্তিপূর্ণ ইনশাআল্লাহ।
গতকাল মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় অনলাইনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এর উদ্যোগে আয়োজিত থানা ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এটিএম মাসুম তার বক্তব্যে আরো বলেন, যেকোনো বিচার কার্যক্রমে সত্যিকার ন্যায়বিচার করতে হলে সকল পক্ষের কথা শুনতে হয়। বিচারকদের দায়িত্ব সকল পক্ষের কথা শুনে ন্যায়বিচার করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা থেকে আমরা ন্যায়বিচার পায়নি। বাংলাদেশের সংবিধানে রাজনৈতিক দল করা, কথা বলার স্বাধীনতা, নাগরিকের সভা-সমাবেশ, মিছিল মিটিং করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে বিচার ব্যবস্থায় নজিরবিহীন ঘটনা সংঘটিত করা হলো। উক্ত দিনে দেশব্যাপী বিরোধী দলগুলোর হরতাল কর্মসূচি থাকায় আমাদের প্রধান আইনজীবী আবেদন করে সময় চেয়েছেন। আদালত আমাদেরকে সেই সময়টুকু দেননি। জনগণ জানতে চায়, তাহলে সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা মামলায় শতাধিকবার আদালত সময় দিয়েছে কেন? অথচ জামায়াতে ইসলামীর মতো এমন সুশৃঙ্খল, দেশের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সময় না দিয়ে তড়িঘড়ি করে রায় বহাল রাখার আদেশ দেওয়া হলো! জনগণ দেখেছে জামায়াত ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি, জামায়াতে ইসলামীকে এদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যর্থ পথে হেঁটে মূলত বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা জানে না, এ আন্দোলন হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের আন্দোলন। এ আন্দোলনের সরাসরি পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। দুশমন যতো চেষ্টাই করুক না কেন সকল বাঁধা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বাংলাদেশের সবুজ জমিনে ইসলামী আন্দোলন তথা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার আপন মহিমায় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ হলো ইকামতে দ্বীন বা ইসলামী আন্দোলনের কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখা। পৃথিবীতে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই মুমিনদের এগিয়ে যেতে হয়। এদেশে প্রায় ৯২% মুসলিম বসবাস করেন, চেতনায় সবাই মুসলিম। ইসলাম ছাড়া এদেশে কেউই জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করতে পারবে না। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে এই দলটির নাম মুছে দেওয়া অসম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জনগণের দাবি আদায়ে সর্বত্র প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। জামায়াতসহ সকল বিরোধী দলের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করছে। এরই মাঝে তড়িঘড়ি করে আদালত থেকে নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল করা হলো। অপরদিকে জামায়াতের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার আবেদন খারিজ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, কোনো ষড়যন্ত্রই এদেশে ইকামাতে দ্বীনের কাজ থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারবে না। এদেশের জনগণের সত্যিকার মুক্তির জন্য আমাদেরকে কঠিন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে হবে। দেশে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের দাবি উপেক্ষা করে একতরফার ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন এদেশে করতে দেওয়া হবে না ইনশাআল্লাহ।