ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সরকার আমাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, ইসলামী আন্দোলন করার অধিকারসহ সকল নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের বসে থাকলে চলবে না। মানবতার কল্যাণ ও মুক্তির জন্য সকলকে ময়দানে তৎপর হতে হবে। আল্লাহর আইনকে বিজয়ী করার জন্য আন্দোলনকে সফল করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই তাগুতের কাছে মাথা নত করা যাবে না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় চলমান আন্দোলনে জানমাল বাজি রেখে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল জুমাবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরার দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় মজলিসে শূরার বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ। সম্মেলনে আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, ড. মোবারক হোসাইন সহ মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও মজলিসে শুরার সদস্যবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কেননা কাল কেয়ামাতের কঠিন দিনে আমাকে আপনাকে আল্লাহর কাছে জবাবদীহি করা লাগবে। এজন্য আমল ও আখলাকের সমন্বয় ঘটিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদেরকে ঋণমুক্ত জীবন-যাপন করার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। মৃত্যুর পূর্বেই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সম্পদকে আল্লাহর জিম্মায় অসিয়ত করে যেতে হবে। কোনো অবস্থাতেই রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। সর্বদা একে অন্যকে ক্ষমা করে দেয়ার মহৎ গুণের অধিকারী হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করল, আল্লামা সাঈদীর মত একজন বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও দুইবারের নির্বাচিত এমপি মারাত্মক কার্ডিয়াক এ্যাটাকের পরও তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে চরম অবহেলা করা হয়েছে, কালক্ষেপণ করা হয়েছে। কোনো মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়নি। আরও বেদনাদায়ক ব্যাপার হলো বর্তমান জালেম সরকার ঢাকায় তাঁর জানাযার অনুষ্ঠান তো দূরের কথা গায়েবানা জানাযা পর্যন্ত করতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর গায়েবানা জানাযায় বাধা দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হয়েছে। এই স্বৈরাচারী জালেম সরকারের অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জালিমের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করাকে আল্লাহ তাআলা উত্তম জিহাদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই আমাদেরকে সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ময়দানে কাজ করে যেতে হবে।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন হিসেবে আল্লাহর জমীনে তাঁরই দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টায় জামায়াতের দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদেরকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তিদের মজবুত ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ইলমী যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আল্লাহর গোলাম হিসেবে জান্নাতের প্রত্যাশায় আমলী জিন্দেগি উন্নত করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে এদেশের ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার কাজ করছে। কিন্তু এদেশের শান্তিকামী জনগণ তা আর হতে দেবে না। এই জালেম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গণআন্দোলনের বিকল্প নেই। এক দফার আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এক গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করা হয়েছে। সরকার জুলুম নির্যাতনের অংশ হিসেবে বার বার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরেও আমীরে জামায়াত সহ নেতৃবৃন্দকে বের হতে দিচ্ছে না। জেলগেট থেকেই তাদেরকে নতুন নতুন মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে। আমরা আজ ব্যথিত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর (রহ) জন্য। আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তীতেও সরকার তার লাশ ও জানাজা নিয়ে অন্যায় আচরণ করেছে। আল্লামা সাঈদীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে আমাদের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে তৃণমূলে সংগঠনকে আরও মজবুত করতে হবে। আমরা যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছি সেখানে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। এই ক্রান্তিকালে দেশের ও জাতির প্রয়োজনে আন্দোলন সংগ্রামে মজলিসে শূরার সদস্যগণকে সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।