বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোয়া যা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করেনি। শ্রমিক শ্রেণি নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, যারা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন করছে সেই লুটেরা এবং মজুদদাররা বর্তমান সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনার পায়তারা করছে। তাদের ক্ষমতার এই দীর্ঘ সময়ে জনগণ একটি নির্বাচনেও সুষ্ঠু ভোটের অধিকার পায়নি। ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার গুম, খুন, হামলা মামলা আর ভয়াবহ জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে গোটা দেশকে আতঙ্কের বেলাভূমিতে পরিণত করেছে। এমতাবস্থায় এই জালেম সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সকল মেহনতি শ্রমিক জনতাসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। সেই সংগ্রামের অংশ হিসেবে আগামী ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে তিনি রাজধানীবাসী সহ সকলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এক মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর শ্রম বিভাগের উদ্যোগে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। মহানগরী শ্রম সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, সোহেল রানা মিঠু, মাহবুবুর রহমান প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বর্তমান ফ্যসিস্ট সরকারের আমলে জনগণের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আল আজমী, ব্যারিস্টার আরমান, মেধাবী শিবির নেতা অলিউল্লাহ, আল মোকাদ্দেস সহ অসংখ্য মানুষকে গুম করে রাখা হয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ বারো বছর যাবৎ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দশ দফা ঘোষণার পরদিনই জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে অন্যায় ও মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি গুমকৃতদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান সহ সকল নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেন।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোয়া হওয়ায় মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের জন্য জীবনধারণ আজ কষ্টকর হয়ে গেছে। এখানে রাস্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের কষ্ট লাঘবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কামানোর জন্য উৎপাদন ব্যয় কমানো, সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া এবং মুনাফাখোরী ও মজুদদারী বন্ধ করা। কিন্তু যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছে তারা শুধু জনগণের কষ্টকে বাড়িয়ে তুলছে। একদিকে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিরাপত্তা নেই অপরদিকে দীর্ঘ পনের বছর যাবৎ তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আছে। তাদের অধীনে কোনো পর্যায়ে একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। তিনি ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে সমকক্ষ্য নয় এমন একজন প্রার্থীকেও তারা সহ্য করতে পারেনি। মাত্র ছয় মাসের জন্য একটি আসনে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে জিতিয়ে আনার জন্য একজন প্রার্থীকে যেভাবে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে তা গোটা দেশবাসী দেখেছে। এমনি অবস্থায় আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ন্যূনতম কোনো সম্ভাবনা নেই। জামায়াতে ইসলামী এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবেনা।
নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে, শ্রমিক শ্রেণির অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আগামী ১ আগস্টের সমাবেশ মাইল ফলকের ভূমিকা পালন করবে। এ সমাবেশ থেকে কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধের দাবীকে জোরদারভাবে তুলে ধরা হবে। তিনি জামায়াতে ইসলামী আহুত সমাবেশকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা গুলোর সার্বিক সহযোগিতার কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবদুস সালাম বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেনি। তাই শ্রমিক মেহনতি জনতা জামায়াতে ইসলামীর এই যৌক্তিক দাবী আদায়ে রাজপথে সংগ্রামী ভূমিকা পালন করবে।