বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ঈদুল আযহা পালনের যে ট্রেডিশান তা আমরা পেয়েছি তা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ. ও তার সন্তান ইসমাঈল আ. এর একটি স্মরণীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে। আজকে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের এই ঈদ পুনর্মিলনী সমাবেশে সেই কুরবানীর শিক্ষা আলোচিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর সামনে দু’টি ঈদ রয়েছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। মহান আল্লাহ তায়ালা জাতির পিতা হিসেবে হযরত ইবরাহীম আ. কে নির্বাচিত করেছেন। সেই জাতির পিতা ইবরাহীম আ. আল্লাহর অনেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ঈমানের সব পরীক্ষা দিয়ে তিনি রাব্বুল আলামিনকে পরিপূর্ণভাবে চিনতে পেরেছিলেন। বয়বৃদ্ধকালে তিনি সন্তান লাভ করেন। পরবর্তীকালে মহান আল্লাহ তাকে স্বপ্ন দেখালেন, তিনি তার সন্তান ইসমাঈল আ. কে কুরবানী করছেন। আজকে কুরবানীর ফলে আমাদের ঈমানী ও শারীরিক শক্তি সঞ্চয় হয়েছে। আমরা কুরবানীকে ভোগের উপলক্ষ্য না করে বরং ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে নিজেদেরকে উজ্জীবিত করে সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর আইনকে বিজয়ী করার জন্য চেষ্ট করি। এটাই হবে সত্যিকার কুরবানীর শিক্ষা।
তিনি আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত-সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ রাজিবুর রহমান পলাশ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মু. দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ তায়ালার পথে ত্যাগ ও কুরবানীর শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের নিজেদেরকে অগ্রগামী হতে হবে। দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যারা দুনিয়ার সুখ সুবিধাকে আখেরাতের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় সত্যিকারভাবে তারাই আল্লাহর দ্বীনের পথে কাজ করার উপযোগী। এজন্য আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। আমাদের ছেলে-মেয়ে পরিবার সহ সবার প্রতি অনেক ভালোবাসা রয়েছে। কিন্তু সেগুলো যেন আমাকে ইকামাতে দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। তাই ইসলামী আন্দোলনের ফরজ দায়িত্ব পালনে কেউ যেন গাফলতি না করি। আমাদের জীবনের যতটুকু শক্তি আছে তার সব গুলো দিয়ে হলেও আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের কাজে অগ্রসর হতে হবে।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, আমাদের মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর রাহে ত্যাগ ও কুরবানির মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ফলে তার স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্যেই আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দাহর উপর কেয়ামত পর্যন্ত কুরবানীকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। যাতে প্রতিটি মুসলমান তার নফসের উপর বিজয়ী হয়ে নিজের প্রিয় বস্তু, ধন-সম্পদ, চিন্তা-চেতনা আল্লাহর রাহে কুরবানি করে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জন করতে পারে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। ক্ষমতাসীন সরকার রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দলীয় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জনগণের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের সম্পদ ও মুদ্রা পাচার, ঋন কেলেংকারী, ব্যাংক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। সরকার তার সামগ্রিক ব্যর্থতায় দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। এমতাবস্থায় জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলাম। শুধুমাত্র ইসলামই জনগণকে তার প্রকৃত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ঈদুল আজহার ত্যাগ ও কুরবানী থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ঈদুল আযহা আমাদেরকে ত্যাগ ও কুরবানীর আদর্শে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক শোষন ও বৈষম্য দূর করে একটি তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গঠনের অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যদি বাস্তব জীবনে ইসলামী আদর্শ অনূসরণ করে সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করতে পারি তাহলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।