ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) সংসদীয় আসনের জামায়াত মনোনিত প্রার্থী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসেন ঠাকুরগাঁও-এ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহের মাঝে ঢেউটিন সহ নানা উপকরণ সহযোগিতা তুলে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশস্ত করে বলেন, মহান আল্লাহ কুরআনে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘তিনি মানুষকে পরীক্ষা করবেন ভয় দিয়ে, ক্ষুধার জ্বালা, জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে। যখন এই ধরনের বিপদ মুসিবত দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করবেন তখন সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শেখানো পন্থা হচ্ছে, সবর করা। যারা ধৈর্য অবলম্বন করবে তারাই সফলকাম হবে।
এসময় সেখানে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামায়াতে ইসলামী মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা সোলাইমান হোসেন, ছাত্রশিবিরের ঠাকুরগাঁও শহর শাখার সভাপতি হুমায়ুন কবির, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মিজানুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ।
দেলাওয়ার হোসেন বলেন, আজ এখানে আপনাদের ঘর পুড়ে গেছে, ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আমরা অভাব অনটনের মধ্যে পড়ে গেছি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদেরকে সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরীক্ষার কথা স্মরণে রাখতে হবে এবং ধৈর্য্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যেই আল্লাহর পক্ষ থেকে সাফল্য কল্যাণ আসবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের জান ও মালের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আমরা সৃষ্টি হিসেবে কেবল এর আমানতদার। যখন ইচ্ছা তিনি আমাদের এই জান-মাল নিয়ে নিতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে হায় হুতাশ করা এটা আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দনীয় কাজ। যখন কোনো বিপদ মুসিবত আসবে তখন আমরা আল্লাহর উপর তায়াক্কুল করবো, তার প্রতি রাজি খুশি থাকবো, ধৈর্যশীল হবো। আল্লাহ আমাদের সকল ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আজকে এখানে দুই ভাইয়ের ঘর পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এটা অনেক বড় কষ্টের ব্যথার বিষয়। কিন্তু আমরা এই পরিস্থিতিতেও ধৈর্য্যের সাথে থাকবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চাইলে অচিরেই এই ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ। এখানে যেসব ভাইয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই পরিবার গুলোকে যেন আল্লাহ ধৈর্য ধারণের তাওফিক দেন, আমীন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি মানবতার কল্যাণকর সংগঠন হিসেবে ইতোমধ্যেই সর্বমহলে প্রশংসা অর্জন করেছে। এদেশে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ সাধন করার প্রয়োজনে। একটি সত্যিকার শান্তির সমাজ, দেশ ও পৃথিবী তৈরি করার জন্য আমাদের পথচলা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামায়াতে ইসলামী মানবতার কল্যাণে নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত ভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছে। দেশের যেখানেই মানুষের কষ্ট, বিপদ মুসিবত ক্ষতি। সেখানেই সবার আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছুটে গিয়েছে, যাচ্ছে। যেখানে বন্যা, অগ্নিকা-, নানাভাবে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত সেখানে মানবতার কল্যাণে জামায়াত ছুটে গিয়ে নিরলসভাবে সেবা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। গত বছর সিলেট, সুনামগঞ্জে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বন্যা হয়েছিল। এদিকে জামালপুর, কুড়িগ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছিল। সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সর্বপ্রথম সেই সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সুনামগঞ্জে যে বন্যা হয়েছিল সেখানে তিন দিন পর্যন্ত কেউ পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। সেই অথৈ পানি বন্যার কবলে পড়া মানুষের পাশে সেবা সহযোগিতা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবেদিত সেচ্ছাসেবক কর্মী ভাইয়েরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল।
এবার ঈদের দিনে যারা কুরবানী দিতে পারে নাই, আমরা ঠাকুরগাঁও সদরের এরকম প্রায় ১০ হাজার মানুষের কাছে কুরবানীর গোস্তো পৌঁছিয়ে দিয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। শীতের সময়ে আমরা অসহায় মানুষের কাছে শীতবস্ত্র তুলে দিয়েছি। যেখানে সুপেয় পানির সমস্যা রয়েছে সেসব স্থানে আমরা বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছি, সেলাই মেশিনসহ নানা ব্যবসায়ী উপকরণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। মুসল্লিদের নামাজের জন্য আমরা ওজুখানা নির্মাণ করে দিয়েছি। ঠাকুরগাঁও এর সার্বিক উন্নয়নে আমরা বেসরকারি ভাবে নানা উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছি। আমরা আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা ও সমর্থন চাই। তবেই আমাদের মানবতার কল্যাণকর এসব কাজগুলো আরও গতিশীল হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা ঠাকুরগাঁও-এ সকল মানুষের অধিকার পৌঁছিয়ে দিতে চাই। প্রতিটি নাগরিক যেন নিজের অধিকার সহজে পেয়ে যায় আমরা সেই সিস্টেম প্রচলন করে দিতে চাই। খোলাফায়ে রাশেদার দেখানো সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা জনগণের প্রকৃত কল্যাণ সাধন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য-ই হচ্ছে মানবতার কল্যাণ করা। জনগণের বুঝা উচিৎ সমাজের নেতৃত্বে ব্যতিত মানুষের সকল কল্যাণকর কাজ ব্যাপকভাবে করা সম্ভব হয় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা হল, জমিনে কাউকে নেতৃত্ব কর্তৃত্ব দেওয়া হলে তার চারটি কাজ বাধ্যতামূলক। এক. সালাত বা নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, দুই. যাকাত আদায় করবে, তিন. মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে, চার. অন্যায় কাজ থেকে জনগণকে বিরত রাখবেন। এই কাজ গুলো মূলত সমাজের মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী সহ রাষ্ট্র প্রধানের মূল দায়িত্ব। ৮৫% মুসলিম দেশ হিসেবে আমরা সারাবিশ্বে পরিচিত কিন্তু আমাদের দেশের দায়িত্বশীল নেতারা কি সেই চারটি কাজ করেন? সুতরাং এই সমাজের প্রত্যেক সেক্টরে জামায়াতে ইসলামী সৎ দক্ষ খোদাভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সুপরিচিত করতে চাই।